সাইদুর রহমান । বাংলাদেশী গায়ক

সাইদুর রহমান বয়াতি একজন বাংলাদেশী গায়ক। তিনি বাউল রীতির লোক সঙ্গীত গেয়ে থাকেন তিনি ২০১৩ সালে শিল্পকলা পদকে ভূষিত হন। এছাড়া ১৯৯৫ সালে সেরা পুরুষ নেপথ্য গায়ক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

 

সাইদুর রহমান । বাংলাদেশী গায়ক

 

সাইদুর রহমান । বাংলাদেশী গায়ক

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

সাইদুর রহমান বয়াতি ১৯৩১ সালে দক্ষিণ মানিকগঞ্জের পুটাইল ইউনিয়নের হাসলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম জিগীর আলী। তার বাবাও গান গাইতেন।

শিক্ষাজীবন

মানিকগঞ্জের পশ্চিম হাসলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন সাইদুর রহমান বয়াতি। ১৯৫৯ সালে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে তিনি অঙ্কে ফেল করেন। এরপর তিনি আর পড়াশোনা করেন নি।

ভাষা আন্দোলনে যোগদান

১৯৫১ সালে, তখন তার বয়স ছিলো ২০ বছর, পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি পায়ে হেটে ঢাকা এসেছিলেন জিন্নাহকে দেখতে। তিনি ঢাকায় এসে দেখলেন সবাই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা বানানোর জন্য আন্দোলন করছে। এই আন্দোলন তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

 

সাইদুর রহমান । বাংলাদেশী গায়ক

 

মুক্তিযুদ্ধে যোগদান

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। সহযোদ্ধাদের সাহস দেয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন গান ও কবিতা লিখতেন।

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

পারিবারিক ভাবেই সাইদুর রহমান সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। তিনি অভিনয়, গান লেখা, সুর দেওয়া, গাওয়া ইত্যাদিতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

ছোটবেলায় তিনি যাত্রাপালায় অভিনয় করতেন। তিনি বড় চুল রেখেছিলেন যাত্রাপালায় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। সেসময় “রানী” নামের একজন নায়িকা বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সাইদুর রহমান বয়াতিই হলেই সেই “রানী”। তিনি রানী ছদ্মনামে অভিনয় করতেন।

তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে নদীর নাম মধুমতি, লাল সালু, চিত্রানদীর পাড়ে, লালন, লিলি পুটেরা বড় হও ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নদীর নাম মধুমতি চলচ্চিত্রে গানের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

১৫ বছর বয়স থেকে তিনি গান লিখছেন। এই পর্যন্ত আধ্যাত্মিক গানের ধারায় জারি, সারি, ভাটিয়ালি, বাউল, মারফতি, নবীতত্ত্ব, কবিগান, মুর্শিদি, গাজীর গান, মালসি, সখী সম্পাত, দমতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব এমন প্রায় পঞ্চাশ শাখায় প্রায় ৩ হাজার গান লিখেছেন। ১৯৭৮ সালে তার প্রথম গানের ক্যাসেট বের হয়।

 

সাইদুর রহমান । বাংলাদেশী গায়ক

 

কর্মজীবন

তিনি নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন। এই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি মানিকগঞ্জে কো-অপারেটিভ ব্যাংকে কাজ নেন। কিন্তু ব্যাংকের হিসেবের খাতায় গান লেখাসহ বিভিন্ন কারণে তার চাকরি চলে যায়। এরপর গান গেয়ে ও মুদি দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। রেডিও, টেলিভিশন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে, অভিনয় করে অর্থ উপার্জন করেন তিনি।

শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সম্পর্ক

১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে দেওয়া এক সংবর্ধনায় সাইদুর রহমান বয়াতি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নিজের লেখা একটি গান গেয়ে শোনান। এতে শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত খুশি হয়ে তাকে একটি ঘড়ি উপহার দেন।

পরিবার

১৯৬৭ সালে সাইদুর রহমান সালেহা বেগমকে বিয়ে করেন। এই দম্পতি ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে জন্ম দিয়েছে। তাদের বড় ছেলে আবুল বাশার আব্বাসীও একজন সঙ্গীত শিল্পী। তিনি রেডিও-টেলিভিশনে গান গেয়ে থাকেন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment