লাকী আখান্দ বাংলাদেশী সংগীত শিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। ১৯৮৪ সালে সরগমের ব্যানারে লাকি আখন্দের প্রথম একক অ্যালবাম লাকী আখান্দ প্রকাশিত হয়।তিনি ব্যান্ড দল হ্যাপী টাচএর সদস্য। তার সংগীতায়জনে করা বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে এই নীল মনিহার, আবার এলো যে সন্ধ্যা এবং আমায় ডেকো না। তিনি বাংলাদেশী জাতীয় রেডিও নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ বেতার এর সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।
Table of Contents
লাকী আখান্দ । বাংলাদেশী সংগীত শিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক
প্রাথমিক জীবন
লাকী আখান্দ ১৯৫৬ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকার পাতলা খান লেনে জন্মগ্রহণ করেন।মাত্র ৫ বছর বয়সেই তিনি তার বাবার কাছ থেকে সংগীত বিষয়ে হাতেখড়ি নেন। তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টেলিভিশন এবং রেডিওতে শিশু শিল্পী হিসেবে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সেই এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের নাম যুক্ত করেন।
কর্মজীবন
১৯৭৫ সালে লাকী আখান্দ তার ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দের একটি অ্যালবামের সঙ্গীতায়োজন করেন। অ্যালবামটিতে “আবার এলো যে সন্ধ্যা” ও “কে বাঁশি বাজায়রে” গানে কণ্ঠ দেন হ্যাপী আখন্দ, “স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে” ও “পাহাড়ি ঝর্ণা” গানে কণ্ঠ দেন হ্যাপী ও লাকী দুজনে, এবং লাকী নিজে “নীল নীল শাড়ি পরে” ও “হঠাৎ করে বাংলাদেশ” গানে কণ্ঠ দেন। আখান্দ ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ঘুড্ডি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
এই চলচ্চিত্রে হ্যাপী আখন্দের পূর্বের অ্যালবামের “আবার এলো যে সন্ধ্যা” গানটি ব্যবহৃত হয় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৮৪ সালে তিনি তার প্রথম একক অ্যালবাম লাকী আখান্দ প্রকাশ করেন। অ্যালবামটি সরগমের ব্যানারে প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান হল “আগে যদি জানতাম”, “আমায় ডেকোনা”, “মামুনিয়া”, “এই নীল মনিহার”, ও “হৃদয় আমার”।
আখান্দের সঙ্গীতচর্চা বন্ধ হয়ে যায় তার ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দ ১৯৮৭ সালে মারা যাওয়ার পর। তিনি প্রায় এক যুগ পরে ১৯৯৮ সালে পরিচয় কবে হবে ও বিতৃষ্ণা জীবনে আমার অ্যালবামের সঙ্গীতায়োজনের মাধ্যমে গানের ভুবনে ফিরে আসেন। পরিচয় কবে হবে ছিল তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম এবং হ্যাপী আখন্দের একক অ্যালবাম শেষ উপহার-এর পুনঃনির্মাণ।
বিতৃষ্ণা জীবনে আমার ছিল ব্যান্ড ও আধুনিক গানের মিশ্র অ্যালবাম। এতে সেসময়ের ছয়জন জনপ্রিয় গায়ক, জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, হাসান, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, ও সামিনা চৌধুরী কণ্ঠ দেন। একই বছর তিনি সামিনা চৌধুরীকে নিয়ে আনন্দ চোখ নামে একটি দ্বৈত অ্যালবাম প্রকাশ করেন।
গোলাম মোরশেদের গীতে এবং আখান্দের সঙ্গীতায়োজনে অ্যালবামটি প্রকাশ করে সাউন্ডটেক। এতে ১২টি গান ছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গান ছিল “কাল কি যে দিন ছিল”, “বলো কে পারে” ও “এই বরষা রাতে”। পরের বছর আখান্দ সামিনা চৌধুরীর একক অ্যালবাম আমায় ডেকোনার সঙ্গীতায়োজন করেন। এছাড়া তিনি ব্যান্ডদল আর্কের “হৃদয়ের দুর্দিনে যাচ্ছে খরা” গানের সুর করেন।
২০০০ সালের পর তিনি আরেকটি মিশ্র অ্যালবাম তোমার অরণ্যের সুর ও সঙ্গীতায়োজন করে। এতে লাকী আখান্দের কণ্ঠে গাওয়া ৩টি গানসহ বাপ্পা মজুমদার, ফাহমিদা নবী, ও নিপুর কণ্ঠে ১০টি গান ছিল। তিনি এই অ্যালবামে সমকালীন তাল, লোক গানের তাল ও তার প্রিয় স্পেনীয় গানের তাল ব্যবহার করেন।
অ্যালবামের তালিকা
- লাকী আখান্দ (১৯৮৪)
- পরিচয় কবে হবে (১৯৯৮)
- বিতৃষ্ণা জীবনে আমার (১৯৯৮)
- আনন্দ চোখ (১৯৯৯)
- আমায় ডেকোনা (১৯৯৯)
- দেখা হবে বন্ধু (১৯৯৯)
- তোমার অরণ্যে
পদক
১৯৬৯ সালে লাকী আখান্দ পাকিস্তানি আর্ট কাউন্সিল হতে “বাংলা আধুনিক গান” বিভাগে পদক লাভ করেন।
মৃত্যু
লাকী আখন্দ দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল তিনি নিজের আর্মানিটোলার বাসাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ সংগীত জগত গভীর শোক প্রকাশ করেন।
আরও দেখুনঃ