রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা । বাংলাদেশী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আবির্ভূত একজন প্রথিতযশা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী । তিনি পটুয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার ঘরানার সংগীতের একজন বহুমুখী প্রতিভা হিসাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকভাবে সমাদৃত । তিনি তার গুনানুরাগীদের কাছে শুধু মাত্র ‘বন্যা’ নামেও পরিচিত।

কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিষ্যদের মধ্যে তাকেই সবচেয়ে জনপ্রিয় গণ্য করা হয়। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কাজের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “স্বাধীনতা পুরস্কার” অর্জন করেছেন।

 

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা । বাংলাদেশী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী

 

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা । বাংলাদেশী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী

জন্ম

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা’র জন্ম বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলায়। তার বাবা মাজহার উদ্দিন খান ও মাতা ইসমাত আরা খান। ইসমাত আরা খান এক সময় কাকলী উচ্চ বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ছিলেন।

শিক্ষা গ্রহণ

তিনি প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশের ছায়ানট ও পরে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।তিনি সেখানে শিক্ষক হিসেবে পান শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, এবং অশেষ চন্দ্র বন্দ্যোপাধায়ের মতো শিক্ষকদের।

তিনি বাংলাদেশে ফিরে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তিনি তার অধ্যয়ন সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হন। তিনি রবীন্দ্র সংগীত ছাড়াও ধ্রুপদী, টপ্পা ও কীর্তন গানের ওপরও শিক্ষা লাভ করেছেন।

তার গানের অ্যালবাম পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সুরের ধারা নামের একটি সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আনন্দ সংগীত পুরস্কার লাভ করেন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা হারমোনিয়াম ও এস্রাজ বাজাতে পারেন। সম্প্রতি ২০২১ সালে তিনি সংগীত-এর উপর তার পিএইচডি গবেষণা সফলতার সহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সম্পন্ন করেন।

 

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা । বাংলাদেশী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী

 

কর্মজীবন

কর্মজীবনে তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের অধ্যাপক ও নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপার্সন হিসেবে কর্মরত। তারই সাথে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয় এর পরিবেষন কলা অনুষদের সম্মানিক ডিন এবং সংগীত বিভাগের প্রধান। ১৯৯২ সালে সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “সুরের ধারা” চালু করেন তিনি।

লেখালেখির সাথেও বন্যার যোগসূত্র আছে। রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে তার কয়েকটি বই আছে।

সংগীতজীবন

শিক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন হবার পর থেকেই তিনি তার সংগীতের প্রদর্শন, নির্ভুল উচ্চারণ এবং সবচেয়ে কঠিন ও অপ্রচলিত গানগুলোও গাইবার আগ্রহের কারণে বিশ্বভারতী ধারার একজন গুরু হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছেন । তিনি অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে, তার বহুসংখ্যক এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।

 

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা । বাংলাদেশী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী

 

স্বীকৃতি, পুরস্কার ও সম্মাননা

বাংলাদেশের বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বহু সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন।

  • স্বাধীনতা পুরস্কার
  • ‘বঙ্গভূষণ’ পদক
  • ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক
  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি মন্ত্রক প্রদত্ত ‘সংগীত সম্মান পুরস্কার’ পেয়েছেন বন্যা ২০১৩ সালে।
  • ২০০২ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ নারী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসাবে আনন্দ সংগীত পুরস্কারে ভূষিত হন, যা পরের বছরও লাভ করেন।
  • ২০১১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে সিটি ব্যাংক এনএ প্রদত্ত গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা।
  • সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা । বাংলাদেশী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা দুসন্তানের জননী। তার স্বামী জি এইচ চৌধুরী। বন্যার মেয়ে প্রিয়দর্শিনী, ছেলে অর্ক দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে লেখাপড়া শেষ করে সেখানেই চাকরি করছেন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে অধ্যাপনা করছেন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment