মামজি স্ট্রেনজার । বাংলাদেশী গায়ক, নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত প্রযোজক ও গীতিকার

মুহাম্মদ মুমিথ আহমেদ একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ র‍্যাপার, গায়ক, নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত প্রযোজক ও গীতিকার। তিনি তার মঞ্চনাম মামজি স্ট্রেনজার ও প্রযোজনা নাম এসপি নামে জনপ্রিয় । ২০০৯ এ তার প্রথম একক সঙ্গীত ওয়ান মোর ড্যান্স এর মাধ্যমে সঙ্গীতজীবন শুরু হয়। এর পরপর মুক্তি পায় শো গার্ল ও ফ্লাই উয়িথ মি। ইংরেজি ও বাংলা ছাড়াও আরবি, হিন্দী, পাঞ্জাবি ভাষায় তিনি গান করেছেন।

মামজি স্ট্রেনজার । বাংলাদেশী গায়ক, নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত প্রযোজক ও গীতিকার

প্রাথমিক জীবন

মামজি স্ট্রেনজার ১৯৮৪ সালের ১৮ই জানুয়ারি জন্মগ্রহন করেন। তিনি পূর্ব লন্ডনের প্লেইস্টোতে বাঙালি মুসলমান পরিবারে বেড়ে ওঠেন। পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে তার অবস্থান পঞ্চম। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন এবং তার ভাইয়ের সংগীত সংগ্রহের প্রতি অনুরক্ত হয়ে তিনি তার সঙ্গীতপেশা শুরু করেন।

মামজি স্ট্রেনজার ২০০০ সালে ইউকে গ্যারেজ এ কাজ শুরু করেন। ২০০৩ পর্যন্ত তিনি পাইরেট রেডিও-এর সাথে কাজ করেন। এরপর সেখানে নিজেকে একজন বহিরাগত মনে হতে থাকায় তিনি পাইরেট রেডিও ত্যাগ করেন (এখান থেকে তার মঞ্চনাম এসেছে)।

তার এক বন্ধু তার ডেমো টেপ পাঠানোর পর বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্কের ২০০৫ সালের আনসাং প্রতিযোগিতায় তিনি তার গান জাম্প আপ পরিবেশন করে তিনজন চূড়ান্ত প্রতিযোগীর একজন হয়েছিলেন। প্রতিযোগিতায় তার সাফল্য প্রযোজক রিশি রিচের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যিনি প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন।

দুই বছর পর ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করার পর রিশি রিচের হাত ধরে স্টুডিয়োতে কাজ শুরু হয়। তার সহায়তায় প্রচারমূলক একক সঙ্গীত লেটস পার্ট ধারণ করেন। পরবর্তী একক স্ট্রেনজারও এখানে ধারণ করা হয়।

২০০৮ এ লন্ডনের সাউথ ব্যাঙ্কের রয়েল ফেস্টিভ্যাল হলে ও লন্ডনের বেথনাল গ্রিনের বৈশাখী মেলায় তিনি গান পরিবেশন করেন। এছাড়া ২০০৮ এর ইউকে-এশিয়া মিউজিক অ্যাওয়ার্ডেও তার পরিবেশনা ছিলো।

একক সঙ্গীত

২০০৯ এর জুলাইতে রিশি রিচের প্রযোজনায় তার প্রথম একক সঙ্গীত ওয়ান মোর ডান্স মুক্তি পায়। সে বছরের আগস্টে তার পরবর্তী একক শোগার্ল মুক্তি পায়। এছাড়া রিশি রিচের রিমিক্স এলবাম দ্য স্ট্রিট অফ বলিউড ৩ এর দুটি গানে তার কণ্ঠ শোনা যায়।

মামজি স্ট্রেনজার ব্রিটিশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শিল্পীদের সাথে কাজ করেছেন। যেমন, এইচ-ধামি, প্রিয়া-কালিদাস, আব্বাস হাসান, মালকিত সিং।২০০৯ সালের নভেম্বরে ওটু এরিনাতে তিনি সিন কিংস্টোনকে সমর্থন করেন।

মামজি স্ট্রেনজার । বাংলাদেশী গায়ক, নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত প্রযোজক ও গীতিকার

 মিক্সটেপ এলবাম মুক্তি

২০১০ এর ১১ ডিসেম্বর তার প্রথম মিক্সটেপ নো স্ট্রেনজার টু দিস মুক্তি পায়। ইটস এ ওয়ান্ডারফুল আফটারলাইফ গানে তার পাশাপাশি স্টেরিও ন্যাশন এর কন্ঠ শোনা যায়। এটি তার প্রথম সঙ্গীত যা ব্রিটিশ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া টুনপুর কা সুপারহিরো চলচ্চিত্রের সঙ্গীতে তার কন্ঠ শোনা যায়।

২০১০ এর ডিসেম্বরে তার প্রথম এলবাম জার্নি বিগিনস মুক্তি পায়। ১৮ ডিসেম্বর স্ট্রাটফোর্ডের স্ট্রাটফোর্ড সার্কাসে ৬০০ শ্রোতার সামনে তিনি এলবামের গান পরিবেশন করেন। এলবামের প্রধান একক সঙ্গীত ফ্লাই উইদ মি ইউকে-এশিয়ান ডাউনলোড চার্টে ১৫ তম স্থান অর্জন করে এবং ১৭ সপ্তাহ ধরে টপ ৪০ এ অবস্থান করে।

পুরস্কার মনোনয়ন

২০১১ এর ইউকে-এশিয়ান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে তিনি চারটি বিভাগে মনোনীত হন এবং বেস্ট আরবান অ্যাক্ট বিভাগে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

প্রথম এলবামের পর ১০ মার্চে গ্র‍্যামি বিজয়ী ব্রিটিশ আরএন্ডবি শিল্পী জুনিয়রের সাথে নতুন প্রচারমূলক একক মামা ইউজড টু সে প্রকাশ করেন। এপ্রিলের ৮ তারিখে হার্টব্রেকার মুক্তি পায়।১৪ এপ্রিল জুনাই কাদেন এর সাথে মিলেআজা মেরে নাল প্রকাশ করেন। এটি জুনাই এর প্রথম সঙ্গীত ছিলো এবং মামজি নিজে এটি প্রযোজনা করেন। ইউকে-এশিয়ান ডাউনলোড চার্টে এটি ৭ম স্থান অর্জন করে, ফলে এটি তার প্রথম সঙ্গীত যা টপ ১০ এ স্থান পেয়েছে।

স্ট্রেনজার ফ্যামিলি

২০১২ এ তিনি জুনাই কাদেন, চার আভেল, তাশা তা ও রেমির সাথে মিলে স্ট্রেনজার ফ্যামিলি নামের সঙ্গীত দল শুরু করেন। ২০১২ এ দলটি তাদের প্রথম সঙ্গীত ঘেটো রিফিক্স প্রকাশ করে। এটি ছিলো কাদেনের ফ্রম মি টু ইউ এলবামের সঙ্গীত ঘেটো এর নতুন রুপ।

২০১২ এর নভেম্বরে দলটি কানাডিয়ান-দক্ষিণ এশীয় দল কালচার শকের সাথে মিলে ‘XOXO’ ট্যুরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এ উপলক্ষে তারা একত্রে ‘XOXO’ নামের সঙ্গীতও প্রকাশ করে।কিন্তু টিকেট বিক্রয়ে মন্দা ও টিফিন বিটস রেকর্ডসের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে ট্যুর বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে স্ট্রেনজার ফ্যামিলি দলও ভেঙে যায়।

মামজি স্ট্রেনজার । বাংলাদেশী গায়ক, নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত প্রযোজক ও গীতিকার

 স্বাধীন শিল্পী হিসেবে সাফল্য

নাফিসের সাযা গানে মামজি কণ্ঠ দেয় যা মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই এশিয়ান ডাউনলোড চার্টে প্রথম স্থানে চলে যায়। তিনি ‘কুরবান’ গানে কন্ঠ দিতে তাশা তা এর সাথে ভারতে আসেন।

পূর্বের লেবেল কোম্পানি টিফিন বিটস রেকর্ডস থেকে বেরিয়ে আসার পর তিনি টাইমলেস লন্ডন প্রতিষ্ঠা করেন, এবং এর অংশ হিসেবে লাভ কমফোর্ট নামে রেকর্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন নতুন শিল্পী এতে যুক্ত হয়। যেমন, শ্যামা, রুপিকা বৈদ্য, নিশ। লায়ান রোজ নতুন প্রযোজক হিসেবে নিযুক্ত হয়। নিশের সাথে তার সঙ্গীত জান আটকি ইউকে আইটিউনস ওয়ার্ল্ড চার্টে প্রথম স্থান অর্জন করে।

মামজি স্ট্রেনজার, নিশের প্রথম এলবাম আইডেন্টিটিতে লাভ লস্ট গানে সহ-প্রযোজক ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ছিলেন। এছাড়া একই এলবামে মা বাবা গানটিতে তিনি প্রযোজক হিসেবে কাজ করেন। এরপর মাস্টার-ডি এর গান ‘তুমি যাইও না’তে কন্ঠ দেন।

২০১৯ এর ১৮ অক্টোবর মামজি স্ট্রেনজার তার দ্বিতীয় এলবাম ভার্টিগো প্রকাশ করেন। এতে বিভিন্ন শিল্পীদের সমাবেশ ছিলো।

২০২০ বলিউড জাওয়ানি জানেমন চলচ্চিত্রের গালান কারদি গানে কন্ঠ দেন। জুলাইয়ে তার ‘হাবিবতি’ গান টপ ট্রিলার গ্লোবাল তালিকায় ৪র্থ স্থানে পৌঁছায়।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment