দিলীপ বিশ্বাস ছিলেন সামাজিক চলচ্চিত্রের মাস্টার মেকার। তিনি বড় বাজেটে জনপ্রিয় তারকাদের নিয়ে জমজমাট নাটকীয় কাহিনির বাণিজ্যিক ঘরানার ছবি নির্মাণে নিজস্ব একটি ধারার সৃষ্টি করেছিলেন। চলচ্চিত্রের অমর এই কারিগরের সৃষ্টি ও তাঁর কীর্তি এখনো সবার কাছে অমলিন। দিলীপ বিশ্বাস ছিলেন একাধারে একজন সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ও লেখক। কর্মজীবনের শুরু করেছিলেন প্যারডি গায়ক হিসেবে। তিনি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন একজন গায়ক হিসেবে জহির রায়হান এর বেহুলা ছবির মাধ্যমে, অভিনেতা হিসেবে “হাবুর বিয়ে” এবং পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সমাধি-এর মত একটি সফল ছবি দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
Table of Contents
প্রাথমিক জীবন
দিলীপ বিশ্বাসের জন্ম ১৯৪২ সালের ৪ ডিসেম্বর পিরোজপুরের চাঁদকাঠি গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
চলচ্চিত্র জীবন
দিলীপ বিশ্বাস এর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র জগতে আগমন ঘটেছিল ষাটের দশকে একজন গায়ক হিসেবে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রবাদ পুরুষ জহির রায়হান এর বেহুলা চলচ্চিত্রে তিনি গায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন জহির রায়হান, মুস্তফা মাহমুদ, বাবুল চৌধুরী প্রমুখের সঙ্গে। একসময় পুরোপুরি নির্মাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এছাড়াও তিনি “আনোয়ারা”, “মোমের আলো”, “দুই ভাই”, “আলোমতি”, “সন্তান” ও “চেনা অচেনা” ছবির গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন। এরপর “হাবুর বিয়ে” নামে একটি চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন।
পরে ঝুঁকে পরেছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালনার দিকে এবং সহকারী পরিচালক হিসেবে “আগুন নিয়ে খেলা” ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন। পূর্ণ-পরিচালক হিহেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সত্তরের দশকে সমাধি ছবিটি পরিচালনার মধ্য দিয়ে। এটি ছিল দারুণ সফল একটি চলচ্চিত্র।
১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের তিন কিংবদন্তি অভিনেতা রাজ্জাক, আলমগীর ও সোহেল রানা’কে একসঙ্গে নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন “জিঞ্জির” চলচ্চিত্রটি। এটি সে সময় অসাধারণ দর্শক প্রিয়তা লাভ করে।এরপর থেকে তিনি একের পর এক দর্শক নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করে গেছেন, যেমন; “দাবী”, “বন্ধু”, “আসামী”, “অনুরোধ”, “জিনজির”, “আনারকলি”, “অংশীদার”, “অপমান”, “অস্বীকার”, “অপেক্ষা”, “অকৃতজ্ঞ”, “অজান্তে” এবং ২০০৫ সালে নির্মাণ শুরু করেছিলেন “মায়ের মর্যাদা” এটি ২০০৬ সালে মুক্তি লাভ করে।
১৯৭৬ সালে মুক্তি পেল তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘সমাধি’। প্রথম ছবিটিই সুপারডুপার হিট হয়। এরপর একে একে নির্মাণ করেন ‘আসামী’, ‘জিঞ্জির’, ‘বন্ধু’, ‘অনুরোধ’, ‘আনারকলি’ প্রভৃতি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র; যেগুলোর কোনটা হিট আবার কোনটা সুপারহিট হয়েছিল।
মৃত্যু
দিলীপ বিশ্বাস ২০০৬ সালের ১২ জুলাই না–ফেরার দেশে চলে যান। তার স্ত্রী গায়ত্রী বিশ্বাস একজন প্রযোজক এবং পুত্র দেবাশীষ বিশ্বাসও একজন নির্মাতা।
প্রযোজিত চলচ্চিত্র
প্রযোজক হিসেবে তার ছিল গীতি চিত্রকথা নামে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতষ্ঠান, এখানে চলচ্চিত্র প্রযোজনা সহ পরিবেশন ও করা হয়। তার পরিচালনার বেশির ভাগ ছবির প্রযোজনা তিনি নিজেই করতেন। ২০০২ সালে পুত্র দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালনায় শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ প্রযোজনা করেছিলেন।
সম্মাননা
- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার [ বিজয়ী শ্রেষ্ঠ পরিচালক ]
আরও দেখুনঃ