পন্ডিত কুলেন্দু দাস [ Pandit Kulendu Das ]

পন্ডিত কুলেন্দু দাস [ Pandit Kulendu Das ] : সংগীতনগরী নামে খ্যাত অবিভক্ত ভারতের ত্রিপুরা [ Tripura ] রাজ্যের কুমিল্লা [ Comilla ] শহরস্থ মুগলটুলীতে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি এক সাংগীতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বহুমুখী সংগীতপ্রতিভা পণ্ডিত কুলেন্দু দাস। সংগীত ও সংস্কৃতির বিকাশে কুমিল্লা ছিল তখন এক সমৃদ্ধ নগরী। কুলেন্দু দাসের জন্মের সময় চলছিল পূর্ণিমা তিথি।

প্রতি রাতে আকাশে চাঁদ উঠত প্রকৃতিকে জ্যোৎস্নালোকে সিক্ত করে। তাই পরিবারের সদস্যরা ‘কুল’ শব্দের অর্থ বংশ এবং ‘ইন্দু’ শব্দের অর্থ চাঁদ, এই দুই শব্দকে মিলিয়ে নতুন অতিথির নাম রেখেছিলেন কুলেন্দু। সেই শিশুপুত্রটি বড় হয়ে সত্যিকার অর্থেই একদিন হয়ে ওঠেন বংশের চাঁদ। কুলেন্দু দাসের বড় বোন শৈল দেবী ছিলেন তৎকালীন সময়ের

একজন প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পী। তিনি সুরসাগর নামে খ্যাত হিমাংশু কুমার দত্ত, সুরের পূজারি শ্যামাচরণ দত্ত, সংগীতজ্ঞ ভীষ্মদেব এবং শাস্ত্রীয় সংগীতগুরু ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরুর কাছে তালিম গ্রহণ করতেন। সেই সুবাদে শৈশবেই বিখ্যাত এই সংগীতগুণীজনদের সান্নিধ্যলাভের সুযোগ পান কুলেন্দু দাস। বড়দিদি শৈল দেবী ধ্রুপদ, খেয়াল, ঠুংরি, রবীন্দ্র, নজরুল, আধুনিক ও পল্লীগানের চর্চা করতেন নিয়মিত।

তৎকালীন সময়ে মঞ্চ, বেতার, চলচ্চিত্র, গ্রামোফোন কোম্পানি এবং সংগীত আসরের একজন অভূতপূর্ব শিল্পী হিসেবে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলায় শৈল দেবী ছিল একটি অসম্ভব জনপ্রিয় নাম। চমৎকার কণ্ঠ, আকর্ষণীয় গায়কি ও দক্ষ সংগীতপ্রতিভার গুণে তিনি লাভ করেন ‘সুরশ্রী’ উপাধি।

সংগীতগুণীজনদের পাশাপাশি বড়দির সাহচর্য ও সংগীতশিক্ষায় তিল তিল করে নিজেকে গড়ে তোলেন কুলেন্দু দাস। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে নিয়ম করে নিবিষ্ট সাধনায় মগ্ন হতেন তিনি। সুমিষ্ট কণ্ঠে যখন তিনি রেয়াজ করতেন তখন যতদূর পর্যন্ত তাঁর গলার আওয়াজ শোনা যেত মুগ্ধ বিস্ময়ে কান পেতে থাকত সবাই।

সংগীতচর্চার প্রতিটি ধ্বনি যেন শ্রোতার কর্ণযুগলে মধুবর্ষণ করত। সংগীতের প্রতি প্রবল অনুরাগের কারণেই নিজের জীবনধারাকে সাজিয়ে নিতে পেরেছিলেন গীত, বাদ্য ও নৃত্যের অপূর্ব সমন্বয়ে। ফলশ্রুতিতে কঠোর সাধনা ও নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে গীত পরিবেশনে, বাদ্যযন্ত্র বাজানোতে এবং নৃত্য প্রদর্শনে হয়ে উঠেছিলেন তিনি সমান পারদর্শী এক বহুমুখী প্রতিভাবান চৌকস শিল্পী।

সাংস্কৃতিক ভুবনের পাদপীঠ প্রাচীন শহর কুমিল্লার পূর্ব নাম ছিল কমলাক। সংগীত ও সংস্কৃতির বিকাশের জন্য অনেক আগে থেকেই প্রাচীন এই নগরী ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে বসবাস করতেন সংগীতের বরপুত্র কুমার শচীন দেববর্মন, উচ্চাঙ্গসংগীতের দিকপাল ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, সুরসাগর হিমাংশু কুমার দত্ত প্রমুখ বরেণ্য সংগীতজ্ঞ। বিদগ্ধ সুরসাধক ও সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রতি মাসে আসতেন শিষ্যদের তালিম দিতে।

স্বনামখ্যাত এই বিদগ্ধ গুণীজনদের মেলবন্ধনে কুমিল্লা শহর হয়ে উঠেছিল সুর অবগাহনের তীর্থস্থান। এমনই এক সুরনন্দন পরিবেশ ও পরিমণ্ডলে জন্মগ্রহণ এবং বেড়ে ওঠার জন্য কুলেন্দু হয়ে উঠতে পেরেছিলেন নিবিষ্ট সংগীতসাধক। সংগীতের যথাযথ তালিম গ্রহণ ও নিয়মিত চর্চায় নিজেকে নিবেদিত করে ধীরে ধীরে কুলেন্দু দাস হয়ে ওঠেন শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন সাধক শিল্পী। একই সঙ্গে শাস্ত্রীয় অঙ্গের লঘু সংগীতেও হয়ে ওঠেন ঈর্ষণীয় পারদর্শী।

একই সময়ে আন্তরিক চর্চার মাধ্যমে গিটার, সেতার, তানপুরা, সরোদ, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র এবং নৃত্য বিষয়েও হয়ে ওঠেন সুদক্ষ শিল্পী। চল্লিশের দশকের শেষের দিকে কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত প্রায় সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি শ্রোতা-দর্শকদের করত বিশেষ চমৎকৃত। কোনো অনুষ্ঠানে মধুর কণ্ঠে গান পরিবেশন করতেন, কোনো অনুষ্ঠানে সুদক্ষ নান্দনিকতায় গিটার বাজিয়ে শোনাতেন, আবার কোনো অনুষ্ঠানে অভূতপূর্ব নৃত্য পরিবেশন করে সবাইকে করে দিতেন বিমোহিত। সমকালীন সর্বগুণী সংগীতশিল্পীদের তিনি ছিলেন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কুমিল্লার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে এতটুকুন ম্লান হতে দেয়নি। আগের মতোই হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব ধর্মের শিল্পীবৃন্দের সম্প্রীতির বন্ধনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সংগীতচর্চা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কণ্ঠসংগীতের অনুশীলন ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। একই সঙ্গে চলত যন্ত্রসংগীত ও নৃত্যশিল্পের ব্যাপক চর্চা।

কুলেন্দু দাস তখন ২৮ বছরের পরিণত যুবক। শহরের বাদুরতলা নামক স্থানে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শুদ্ধ সংগীতশিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান ‘বাণী বিতান’। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শাস্ত্রীয় সংগীত প্রশিক্ষকের মহান দায়িত্ব পালন করেন তিনি নিবিষ্ট চিত্তে। কাছাকাছি সময়েই তাঁর আন্তরিক উদ্যোগে সমমনা শিল্পীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘সুর বিতান’ সংগীত শিক্ষালয়।

সংগীতের প্রতি প্রবল অনুরাগের বলে বলীয়ান কুলেন্দু দাস সংগীতশিক্ষাকে ভালোবেসেই কাটিয়ে দিয়েছেন সারাটি জীবন। শিল্পী সৃষ্টির জন্য শাস্ত্রীয় সংগীতশিক্ষা দানকেই জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন তিনি। জীবনজীবিকা, প্রেম-ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ সবই ছিল তাঁর সংগীতকে ঘিরে। তাই বলে সংসার ও পরিবার-পরিজনের

প্রতি কখনোই উদাসীন ছিলেন না তিনি। স্বভাবগত অমায়িক এবং উদারপ্রাণ সংগীতসেবক কুলেন্দু দাস ছিলেন মিষ্টভাষী । মৃদু ও মধুর কণ্ঠস্বরের অধিকারী এই বিনয়ী সংগীতজ্ঞকে কোনোদিন উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে শোনা যায়নি। প্রচলিত ছিল যে, মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন তিনি গানের সুরে সুরে। ফলে সব বয়সের মানুষের সঙ্গেই ছিল তাঁর মধুর সম্পর্ক।

পোশাক-পরিচ্ছদে অতি সাধারণ এবং ব্যক্তিজীবনে নিরহংকার মানুষ হওয়ায় ছোট-বড় সবার সঙ্গেই মিশতে পারতেন একেবারে আপন হয়ে। আর এজন্যই কুমিল্লার সংগীতাঙ্গনে তিনি যেমন ছিলেন সবার প্রিয়পাত্র, সংগীতগুরু হিসেবেও তেমনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। নিজের সংগীতভাণ্ডার উজাড় করে তালিম দিতেন বলে শিষ্যরা তাঁকে প্রাণভরে সম্মান করত ও ভালোবাসত ।

শিক্ষাগুরুর রক্তচক্ষু নয়, বরং পরম মমতা দিয়ে জয় করে নিতেন শিক্ষার্থীর হৃদয়। আর সে কারণেই ভয়ভীতিহীন চিত্তে শিষ্যরা তাঁর কাছে সংগীতবিদ্যা গ্রহণ করতে পারত। গুরুগম্ভীর ভাব পরিহার করে সংগীত শিক্ষার্থীর অবস্থা বুঝে অত্যন্ত সহজসাধ্য করে সুচারুরূপে তালিম প্রদান করতে তাঁর জুড়ি ছিল না। সংগীতের পাঠদানের সময় গুরুজির মধুময় সুরেলা কণ্ঠ শুনে শিষ্যরাও মুগ্ধ হয়ে যেত এবং চেষ্টা করত গুরুজিকে অনুসরণ করে সংগীতশিক্ষা লাভ করতে।

মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার রাজপথে চলছিল তুমুল আন্দোলন। সেই আন্দোলনের ঢেউ এসে নাড়া দিয়ে যায় কুমিল্লা শহরকে। তখন নিয়মিত গণসংগীত পরিবেশন করে ভাষা আন্দোলনকে উজ্জীবিত রাখতে কুলেন্দু দাসের অবদান কুমিল্লার ইতিহাসে আজো হয়ে আছে চির অম্লান। সংগীতশিক্ষার্থীদের নিয়মিত রিহার্সেল করানো এবং উন্মুক্ত মঞ্চে সমবেত গণসংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কুমিল্লায় ভাষা আন্দোলনের কার্যক্রমকে বেগবান করে তুলতে তিনি কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেছিলেন।

আন্দোলনমুখর উত্তপ্ত এই সময়গুলোতে কুমিল্লা পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী নেতা বাবু অতীন্দ্র মোহন রায়। তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায় কুমিল্লার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেশ কয়েকজন গুরুজি শুদ্ধ সংগীতের তালিম প্রদানের মাধ্যমে শিল্পী সৃষ্টির দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কুলেন্দু দাস ছিলেন অন্যতম। যখন তিনি তানপুরা নিয়ে নিবিষ্ট সাধনায় মগ্ন হয়ে যেতেন, তখন যেন বাতাসের ছোটাছুটিও থেমে যেত নিদারুণ এক ভালো লাগার আবেশে।

কুমিল্লার সুবিখ্যাত ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রতিবছর বার্ষিক নাটক মঞ্চায়নের আয়োজন করা হতো সগৌরবে। সে সময় কলেজের নিজস্ব মিলনায়তন না থাকায় টাউন হলের মঞ্চে কলেজের নাট্যানুষ্ঠান মঞ্চস্থ হতো। কোনো একটি বছর ঐতিহাসিক নাটক মুঘল-পাঠান মঞ্চস্থ হবে এই সিদ্ধান্তে মহড়া চলছিল। তখন মেয়েদের নাটকে অভিনয়ের সামাজিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় পুরুষ মানুষকেই নারী চরিত্রে রূপদান করতে হতো।

যথারীতি একজন কলেজছাত্রকে মুঘল-পাঠান নাটকের নারী চরিত্রের জন্য নির্বাচিত করা হলো। প্রতিদিন কলেজে নাটকের মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছিল এবং সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে সংগীতগুরু কুলেন্দু দাস। নাটকে নারী চরিত্রের একটি গান গাওয়ার দৃশ্য ছিল। সংগীত পরিচালক গানটিতে সুরারোপ করলেন এবং মহড়াও হয়ে গেল। নাটক পরিবেশনের দিন গুরুজি স্টেজের উইংসের পাশে বসে সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। মঞ্চে অভিনয়কারী নারী চরিত্রের কণ্ঠে ভেসে এলো মধুর সুরে গান –

ভালো যদি বাসো মোরে

মুখে বলো না নীরবে জানিয়ো প্রেম

কথা বলো না |

হারমোনিয়ামে সুর তুলে হুবহু মেয়েদের মতো কণ্ঠে গান গেয়ে চলেছেন সাধক সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত কুলেন্দু দাস, আর মঞ্চে নারীবেশী ছাত্রটি ঠোঁট মিলিয়ে সে গানের দৃশ্যে অভিনয় করছিল। কারো বোঝার সাধ্য ছিল না যে, সাজানো নারী চরিত্রের কণ্ঠে শোনা গানটি পরিবেশন করছেন একজন পুরুষ শিল্পী।

কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিংবা সংগীত আসরে সংগীতজ্ঞ কুলেন্দু দাস প্রয়োজনানুসারে উচ্চাঙ্গসংগীত কিংবা হালকা অঙ্গের শাস্ত্রীয় সংগীত অথবা লঘু সংগীত পরিবেশনে কার্পণ্য করতেন না। তবে কখনো কখনো যন্ত্রসংগীত বা নৃত্য পরিবেশনের অনুরোধ করলেও আয়োজকদের বিমুখ করতেন না তিনি।

প্রগতিশীল ধারার নৃত্য কম্পোজ করে পরিবেশন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন বহুমুখী প্রতিভাবান শিল্পী কুলেন্দু দাস। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতার সুরারোপিত গানে নৃত্যরূপ প্রদান করেছিলেন তিনি, যা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নতুন মিলনায়তনে প্রথম পরিবেশিত হয়। নৃত্যটি এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে পরবর্তী সময়ে টাউন হলের মঞ্চে বহু অনুষ্ঠানে সে নৃত্য তাঁকে পরিবেশন করতে হয়েছিল অনেকবার।

সংগীতজ্ঞ কুলেন্দু দাস ছিলেন অত্যন্ত রসিক প্রকৃতির একজন সুশীল মানুষ। যে-কোনো কঠিন পরিবেশে মজার মজার কথা বলে মানুষকে হাস্যরসে আপ্লুত করতে তাঁর জুড়ি ছিল না। উচ্চাঙ্গসংগীত পরিবেশনের ক্ষেত্রে অনেক সময় তিনি বাণীর পরিবর্তে মজাদার ভঙ্গিতে হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ গেয়ে দর্শক-শ্রোতার মনোরঞ্জন করতেন।

১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশে মার্শাল ল জারি হলে থমথমে অবস্থার মাঝে মানুষ দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। কুমিল্লার আর্মি অফিসারদের মধ্যে ঝোঁক চেপেছে তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে টাউন হল মঞ্চে। তাই খোঁজ পড়ল কুমিল্লা সাংস্কৃতিক ভুবনের বিশেষ ব্যক্তিটির। বাসায় খুঁজে না পেয়ে আর্মির লোক টাউন হলের সামনে হাজির হয়ে পাকড়াও করল তাঁকে। কুলেন্দু দাসের ওপর হুকুম জারি হতে লাগল একের পর এক।

জনৈক আর্মি অফিসার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলছে এবং তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে কুলেন্দু দাস ‘ইয়েস’ বলে যাচ্ছেন। অবশেষে আর্মিরা চলে যেতেই উপস্থিত সাংস্কৃতিককর্মীসহ সবাই তাঁকে ঘিরে জানতে চাইল এতক্ষণ ইয়েস বলে তিনি কী কথা বলেছেন? কৌতূহলীদের জবাবে তিনি উত্তর দেন, যারা মার্শাল ল জারি করেছে তাদের কাছে ‘নো’ বলে কোনো বিষয় নেই।

সুতরাং আর্মি অফিসারের ইংরেজি তিনি বোঝেন কিংবা না বোঝেন ‘ইয়েস’ বলা ছাড়া আর কোনো শব্দ তিনি খুঁজে পাননি। এমনকি যদি বলা হতো – তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তাহলেও হয়তো না বুঝেই হাসিমুখে ‘ইয়েস’ বলে দিতেন। একথা বলে তিনি নিজেই হোঃ হোঃ করে হেসে ফেলেন। এমনই সরল মনের হাস্যরসে পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত কুলেন্দু দাস।

নিঃস্বার্থ আপনজনের মতোই মানুষকে ভালোবাসতেন বলে মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছেন তিনি প্রাণভরা। বর্ণাঢ্য সংগীতজীবন পেরিয়ে অসংখ্য শিষ্য, গুণগ্রাহী ও ভক্ত রেখে ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অক্টোবর এই মহান সুরসাধক দেহত্যাগ করে অনন্ত সুরালোকের পথে যাত্রা করেন।

[ পন্ডিত কুলেন্দু দাস [ Pandit Kulendu Das ]

পন্ডিত কুলেন্দু দাস [ Pandit Kulendu Das ]

আরও পড়ুন:

 

1 thought on “পন্ডিত কুলেন্দু দাস [ Pandit Kulendu Das ]”

Leave a Comment