কবিগান ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে আজকের আলোচনা। কবি বলতে এখানে বুঝনো হয় যে, অশিক্ষিত কিন্তু বেদপুরান, রাজনীতি, ইতিহাস সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল স্বভাবকবি। এই কবিকে কবিয়ালও বলা যায়। ১৭৫৭ সালে পালাশীর যুদ্ধের পর থেকে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দ অর্থাৎ ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের মৃত্যুর বৎসর পর্যন্ত কবিয়ালদের প্রতিষ্ঠা চরমে উঠেছিল। যদিও তার পূর্বে ও পরে একাধিক শতাব্দী জুড়ে কবিগানের বিস্তৃতি ঘটে।
Table of Contents
কবিগান ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত
কবিগানের উদ্ভব সম্পর্কে রবীঠাকুরের মন্তব্য:
“ইংরেজের নতুন সৃষ্ট রাজধানীতে পুরাতন রাজসভা ছিল না। পুরাতন আদর্শ ছিল না। তখন কবির আশ্রয়দাতা রাজা হইল সর্বসাধারণ নামক এক অপরিণত স্থলায়তন বাকি সেই হঠাৎ রাজার সভায় উপযুক্ত গান হইল কবিদলের গান। তখন যথার্থ সাহিত্যরস আলোচনার অবসর, যোগ্যতা এবং ইচ্ছা কয়জনের ছিলো? তখন নুতন রাজধানীর নতুন সমৃদ্ধশালী কর্মশ্রান্ত বণিক সম্প্রদায় সন্ধ্যাবেলায় বৈঠকে বসিয়া আমাদের উত্তেজনা চাহিত তাহারা সাহিত্যরস চাহিত না।”
কবিগান সম্পর্কে সজনী কান্তদাস বলেন:
“বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত ভরজা, পাঁচালী, খেউড়, আখড়াই, হাফ আখড়াই, দাঁড়াকবিগান, বসাকবিগান, চপকীৰ্ত্তন, টপ্পা, কৃষ্ণযাত্রা, প্রভৃতি বিচিত্র নানা বস্তুর সংমিশ্রণে কবিগান জন্মলাভ করে, তাতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ব্যবহার এতটা নান্দনিক নয়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ধারাবাহিকতায় কবি গান মূলতঃ রচনা কিংবা গাওয়া হয় না। এর গীতি শৈলী বা প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী”।
প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, অনুপ্রাসের ব্যবহার, সরস রাগবিস্তার, যুক্তিজাল, অপরপক্ষকে আক্রমণ এবং আপনবক্তব্যের প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির উপর নির্ভর করে কবিয়ালের হারজিৎ। রাগরূপের এতটুকু প্রাধান্য না থাকলেও কবিগানের একটি বিশেষ নান্দনিক দিক আছে যা শ্রোতাদের মধ্যে সার্বিকভাবে একটি আবেশ তৈরী করে রাখে। এর মধ্যে রামবসু ছিলেন যথার্থ রসিক প্রকৃতির কবি।
কবিয়াল রামবসুকে ঈশ্বরগুপ্ত বলেছেন:
“কবিয়ালদের কালিদাস। রামবসুর গান বাঙালী সমাজে সমাদৃত হয়েছিল। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ রামবসুর গান গাইতেন। প্রসংগক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে; ‘মনে রইল সই মনের কথা, রামবসু রয়চিতা এই গানটি ভেঙে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেন, মনে রয়ে গেল মনের কথা।
তারাশংকর বাংলার এই বিপর্যস্ত সমাজ-মনস্কতার ফসল কবিগানকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তার উপন্যাসে। কবিগানের ভাষায় পরিপাট্য রুচির বিশুদ্ধতা নেই। তৎকালীণ সমাজমনস্কতার পরিচয়বাহী এই কবি গান তবু বাংলার নিজস্ব সম্পদ।
আরও দেখুনঃ
1 thought on “কবিগান ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত”