আবদুল হালিম বয়াতি একজন বাংলাদেশি লোকসঙ্গীত শিল্পী। তিনি বিচার ধারার গান ও আধ্যাত্মিক সুফিগানের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তিনি বাংলাদেশে প্রথম লোকবাদ্যযন্ত্র সারিন্দা প্রবর্তন করেন। তিনি পাঁচ থেকে ছয় হাজার গানের রচয়িতা। লোকসঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।
Table of Contents
প্রারম্ভিক জীবন
আবদুল হালিম বয়াতি ১৯২৯ সালের ৩০ অক্টোবর (১৩৩৬ বঙ্গাব্দের ১৫ কার্তিক) মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বড়দোয়ালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুল জব্বার মোড়ল এবং মাতা বড় বিবি।
মাত্র ৭ বছর বয়সে শিশু হালিম সঙ্গীতের আকাশে ধুমকেতুর মত আকস্মিকভাবে আবির্ভূত হয়ে ধ্রুবতারার ন্যায় স্থায়ী আসন করে নেয় এক শিশু। পরে বঙ্গ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সঙ্গীত পরিবেশন করে বেড়ান। তিনি কারও কাছে সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেননি, স্বয়ং শিক্ষিত এই শিল্পী সক্রিয়তায় সমুজ্জ্বল চিরবিজয়ী শিল্পী হিসেবে জনমনে শ্রদ্ধাসনে সমাসীন।
কর্মজীবন
১৯৫৭ সালে বেতারে সরাসরি অনুষ্ঠানে লোকবাদ্যযন্ত্র সারিন্দা বাজান।পরবর্তীতে এটি পূর্ব বাংলায় জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র হিসেবে পরিচিতি পায়।
সঙ্গীতকে তিনি ধর্ম সঙ্গীতে পরিণত করে মানবতার মুক্তির পথ আবিষ্কার করেছেন। তার আধ্যাত্মিক গানে মানুষের আত্মিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্তের স্বীকৃতি মেলে। তার গানের বিষয় বস্তু বহুবিচিত্র। লোক সঙ্গীতের একটি বিশেষ ধারা ‘বিচার গান’ তারই এক অভিনব সৃষ্টি। আদর্শ প্রচার মাধ্যম ছাড়াও সঙ্গীতকে তিনি শিক্ষামূলক শিল্পে পরিণত করেছেন।
বাংলা একাডেমি থেকে ২০০০ সালে প্রকাশিত হয় আব্দুল হালিম বয়াতী, জীবন ও সঙ্গীত নামক একটি জীবনী গ্রন্থ। তিনি বাংলা একাডেমির একজন সম্মানিত ফেলো।
জননন্দিত শিল্পী আব্দুল হালিম মিয়া জাতীয় সম্প্রচার ও গণমাধ্যমের প্রতিটি বিভাগে সার্থকতার সঙ্গে সঙ্গীত পরিবেশ করেছেন। তিনি জাতীয় সম্প্রচার ও গণমাধ্যমের বিশিষ্ট গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী এবং সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন।
পুরস্কার
১৯৫৭ খৃষ্টাব্দ থেকে রেডিওতে, ১৯৫৮ খৃষ্টাব্দে চলচ্চিত্রে (আসিয়া ছবিতে সচিত্র), ১৯৬৫ খৃষ্টাব্দ থেকে গ্রামোফোন রেকর্ডে, ১৯৬৫ খৃষ্টাব্দ থেকে বিটিভিতে, ১৯৮২ খৃষ্টাব্দ থেকে ক্যাসেট এবং বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে অপরিসীম জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এশিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (আবু) এর ন্যায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ও তার গান পুরস্কৃত হয়েছে।
পরলোকগমন
আব্দুল হালিম মিয়া একজন সিদ্ধার্থ কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। এই মহান সুফি সাধক ২০০৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পরলোক গমন করেন।
সম্মাননা
- কবি জাসিমউদ্দিন গবেষক স্বর্ণপদক
- বাংলা একাডেমি ফেলো (২০০১)
আরও দেখুনঃ