বাংলাদেশের সংস্কৃতি জগতের অন্যতম পথিকৃৎ, বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ এবং ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্জীদা খাতুন আর নেই। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর পুত্রবধূ ও ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই সন্জীদা খাতুন ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। এক সপ্তাহ আগে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগেও একই অসুস্থতার কারণে তাঁকে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল।
প্রয়াত এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়েছে আগামীকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায়, রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে।
১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণকারী সন্জীদা খাতুনের শৈশব থেকেই সাংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। তাঁর বাবা ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন এবং মা সাজেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করার পর তিনি ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করা সন্জীদা খাতুন দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তবে তাঁর কর্মপরিধি শুধু শিক্ষাঙ্গনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সংস্কৃতি, সংগীত, আবৃত্তি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে তিনি ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
তাঁর সংগীতচর্চার সূচনা হয়েছিল সোহরাব হোসেনের কাছে নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান ও পল্লিগীতি শেখার মাধ্যমে। পরবর্তীতে হুসনে বানু খানমের কাছে রবীন্দ্রসংগীত শেখার হাতেখড়ি হয়। এরপর শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলিমা সেনসহ আরও অনেক গুণীজনের সান্নিধ্যে সংগীতে পারদর্শিতা অর্জন করেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে তিনি ব্রতচারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। সংগীতচর্চার পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও রেখেছেন বিশেষ অবদান।
সন্জীদা খাতুন শুধু একজন সংগীতজ্ঞই নন, বরং দেশের প্রতিটি সংকটে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও সংগঠনের মাধ্যমে তিনি বাংলা সংস্কৃতির বিকাশে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। ছায়ানট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি বাঙালির সংস্কৃতিকে সুসংগঠিত করেছেন এবং পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তাঁর চলে যাওয়া বাংলা সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর কর্ম ও আদর্শ আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
#সন্জীদা_খাতুন #সংস্কৃতি_অগ্রদূত #বাংলা_সংস্কৃতি #ছায়ানট #সংগীতজ্ঞ #বাংলার_আত্মা #সংস্কৃতি_আন্দোলন #রবীন্দ্রসংগীত #নজরুলসংগীত #বাংলার_অভিমান #সংস্কৃতির_প্রহরী #শ্রদ্ধাঞ্জলি #বাংলার_গৌরব #শিক্ষা_ও_সংস্কৃতি #বাংলার_প্রেরণা