রাগ বিলাসখানি টোড়ি উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতশাস্ত্রে বর্ণিত রাগ বিশেষ। কথিত আছে মিঞা তানসেনের পুত্র হিসেবে বিলাস খাঁ এই রাগটি সৃষ্টি করেছিলেন। অল্প বয়সে সুফিসাধনায় মজে ঘর ছেড়ে ছিলেন তিনি। সেদিন তার গাওয়া সেই রাগ তার নিজস্ব রচনা। নাম ‘বিলাসখানি টোড়ি’।
রাগ বিলাসখানি টোড়ি
এটি ভৈরবী ঠাট থেকে উৎপন্ন ঔড়ব-সম্পূর্ণ জাতীয় রাগ। যদিও এই রাগ ভৈরবী ঠাটের কিন্তু রাগটি টোড়ি অঙ্গে গাওয়া হয়। এই জন্য এই রাগকে অনেকে টোড়ির ভিন্নতর প্রকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই রাগের জাতি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। প্রথাগতভাবে এই রাগকে ঔড়ব-সম্পূর্ণ ধরা হয়। কিন্তু মতান্তরে একে ষাড়ব-সম্পূর্ণ বলা হয়।
রাগটির নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে রাগটি টোড়ি গ্রপের সদস্য, কিন্তু এটি টোড়ি ঠাট থেকে উৎপন্ন নয় | এই রাগটিতে যেহেতু ঋষভ, গান্ধার, ধৈবত এবং নিষাদ – এই চারটি স্বরের কোমল প্রকার ব্যবহৃত হয় এবং তা ভৈরবীর সাথে সম্পূর্ণ মেলে, তাই এই রাগটির ঠাট ভৈরবী | তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে রাগটির নামকরণে কেন টোড়ি শব্দের উল্লেখ থাকবে? এর উত্তর হচ্ছে, একটি রাগের চরিত্র বোঝা যায় রাগটির শাস্ত্রীয় চলন এবং তার অনুশাসনের প্রকৃতি অনুযায়ী |
এক্ষেত্রে এই রাগটির চলন পুরোটাই আবার টোড়ি অঙ্গের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ | উদাহরণে বলা যায়, টোড়ির মতো এই রাগেও রে এবং গা এর আন্দোলন ও মীড়এর ব্যবহারে রাগটির গাম্ভীর্য ফুটে ওঠে যেটিকে বলা হচ্ছে টোড়ি অঙ্গ; আর বিলাসখানি-র বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাগটির আরোহে মধ্যম ও নিষাদ এবং অবরোহে শুধু পঞ্চম স্বর বর্জিত থাকে | অর্থাৎ রাগ দুটিতে স্বরসমূহ একই থাকলেও চলনের পার্থক্যের জন্যই রাগ দুটির চরিত্র ও মেজাজ সম্পূর্ণ আলাদা | রাগরূপ নিয়ে অতি সামান্য দু-চার কথা বললাম বটে, এটি কিন্তু রাগ লক্ষণকে আলোকিত করতে খুব কম কাজ করে |
এই রাগটি গাওয়া বা বাজানোর সময় সকাল ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে | অর্থাৎ রাগ দুটিতে স্বরসমূহ একই থাকলেও চলনের পার্থক্যের জন্যই রাগ দুটির চরিত্র ও মেজাজ সম্পূর্ণ আলাদা | এই রাগটিতে মূলত ভক্তি সঙ্গীত গাওয়া হয়ে থাকে | কিরানার বিখ্যাত শিল্পী বিদুষী গাঙ্গুবাঈ হাঙ্গেল এই রাগে তান নিতে পছন্দ করতেন না, বলতেন, ” ইস রাগকে ভাবনা মে তান কি জগহ নহী হৈ |”
রাগ বিলাসখানি টোড়ির কারিগরি বৈশিষ্ট:
আরোহণ: স ঋ জ্ঞ প, দ র্স।
অবরোহণ : র্স ণধ প, দ মজ্ঞ রগর রস।
ঠাট : ভৈরবী।
জাতি : ঔড়ব-সম্পূর্ণ।
বাদীস্বর : শুদ্ধ ধৈবত।
সমবাদী স্বর : কোমল গান্ধার।
অঙ্গ : উত্তরাঙ্গ।
সময় : দিনের প্রথম প্রহর।
পকড় : দম, জ্ঞঋ, জ্ঞঋ স।
অন্যমতে আরোহণে ঋষভ ও ধৈবত বর্জিত। এই মতে জাতি ঔড়ব-সম্পূর্ণ। বাদী মধ্যম ও সম্বাদী-ষড়্জ।
তথ্যসূত্র:
সঙ্গীত শাস্ত্র। তৃতীয় খণ্ড। শ্রীইন্দু ভূষণ রায়।
আরও দেখুন:
1 thought on “রাগ বিলাসখানি টোড়ি”