সঙ্গীত জগতে অনন্যা সাধারণ গ্রন্থ ‘সঙ্গীত পারিজাত’-এর স্রষ্টা পণ্ডিত অহোবলের জন্ম শতাব্দী এবং স্থান সম্পর্কে বিভিন্ন গুণীজন ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করিয়া থাকেন। কেহ মনে করেন অহোবল পঞ্চদশ শতাব্দী, ভিন্নমতে ষোড়শ ও কাহারও মতে সপ্তদশ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। যাহা হোক ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণে বিচার করলে অহোবলের জন্ম সময় ষোড়শ শতাব্দীর শেষার্দ্ধ কিংবা সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্চ বলিয়া মনে করা হয়।
পণ্ডিত অহোবল । শিল্পী জীবনী
পণ্ডিত অহোবল দাক্ষিণাত্যের দ্রাবিঢ় বংশীয় অধিবাসী ছিলেন। তাঁহার পিতা শ্রীকৃষ্ণ পণ্ডিত সংস্কৃত ভাষার একজন অসাধারণ পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। ফলে, অহোবল শৈশবকাল হইতে পিতার কাছে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং অতি অল্প সময়েই এই ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন।
তিনি দক্ষিণী সঙ্গীত শাস্ত্র গ্রন্থ এবং ক্রিয়াত্মক সঙ্গীতে শিক্ষালাভ করিয়া উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত শিক্ষাকল্পে নানা জায়গায় ঘুরিয়া বেড়ান এবং পণ্ডিত লোচন সহ বহু সঙ্গীত শাস্ত্রকারদের অমূল্য গ্রন্থ পঠন-পাঠন দ্বারা স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ ধ্যান-ধারণায় উপনীত হন। অহোবল নিজস্ব সঙ্গীত প্রতিভা এবং পাণ্ডিত্য প্রদর্শন করিয়া ‘ধর্মগড় নগরের রাজার বিশেষ প্রীতিভাজন হন। এবং তাঁহার গুনের স্বীকৃতি স্বরূপ অহোবলকে গুনগ্রাহী রাজা সভাগায়কের পদে নিযুক্ত করেন।
অপরিমিত উৎসাহ এবং প্রেরণাহেতু তাঁহার সঙ্গীত জ্ঞান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। তিনি আনুমানিক ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে ‘সঙ্গীত পারিজাত’ নামক অমূল্য গ্রন্থটি রচনা করেন। যাহা পূর্ববর্তী এবং বর্তমান সঙ্গীতগুণীদের পথপ্রদর্শন এবং পাথেয়। বীনার তারের দৈর্ঘ্যকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করিয়া সপ্তকের শুদ্ধ ৭টি ও বিকৃত ৫টি মোট ১২টি স্বরকে সম্পূর্ণ নূতন পদ্ধতিতে স্থাপনা তাঁহার বিশিষ্ট্য কীর্তির পরিচায়ক।
বলাবাহুল্য এর প্রায় দুইশত বৎসর পরে পাশ্চাত্ত্যের গণিতজ্ঞগণ অহোবলকৃত স্বরস্থাপনকে আবিস্থার করেন। আমাদের দেশেও পরবর্তীকালের সঙ্গীত শাস্ত্রকারগণকে অহোবলকৃত বিজ্ঞানস্মত ত্রুটিহীন তথ্যকেই অনুসরণ করিতে দেখা যায় । শুধু ইহাই নহে ‘সঙ্গীত পারিজাত’ গ্রন্থটিতে মানব জাতি তথা প্রকৃতির অন্যান্য জীব-জন্তদের মধ্যে শব্দ ও সঙ্গীতের প্রভাব তিনি লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন, যাহা তাহার সঙ্গীত সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান এবং গভীর মননশীলতা ও পাণ্ডিত্যেরই সাক্ষ্য বহন করে।
আরও দেখুনঃ