ধ্রুপদ [ Dhrupad, Music Genre ] : ধ্রুবপদ’ শব্দের অপভ্রংশ হচ্ছে ধ্রুপদ। “ধ্রুব’ অর্থ স্থির, নির্দিষ্ট ও সত্য এবং ‘পদ’ অর্থ কথাযুক্ত গীত। তাই ধ্রুবপদ বা ধ্রুপদ বলতে এক প্রকার ধীর, স্থির, গম্ভীর ও বীরত্বব্যঞ্জক সংগীতকে বোঝায়। ভারতবর্ষে এই গানের চর্চা কবে থেকে শুরু হয় প্রমাণসহ তা সঠিকভাবে বলা বেশ দুরূহ ব্যাপার।

Table of Contents
ধ্রুপদ । গীত ধারা । হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত
সংগীতের ইতিহাস থেকে জানা যায়, মহর্ষি ভরত মুনির সময় ‘ধ্রুবা’ নামে এক প্রকার গানের প্রচলন ছিল, যার পরম্পরা চলেছিল খ্রিষ্টীয় নবম-দশম শতক পর্যন্ত। আবার ‘প্রবন্ধ’ নামে এক প্রকার গানের প্রচলনের কথাও জানা যায়। কেউ কেউ বলেন, এসব সংগীতশৈলীর অনুকরণে পরবর্তী সময়ে এই শৈলী সৃষ্টি হয়েছে।
প্রখ্যাত সংগীতগুণীজনেরা এই গানের প্রবর্তকের সন্ধান করতে গিয়ে পঞ্চদশ শতাব্দীতে গোয়ালিয়রের রাজা সংগীতজ্ঞ মানসিংহ তোমরকেই (রাজত্বকাল : ১৪৮৩-১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দ) এর আবিষ্কারকের সম্মান প্রদান করেছেন। স্বনামখ্যাত সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ডে ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ‘সর্বভারতীয় সংগীত সম্মেলন’-এ উক্ত মতকে সমর্থন করে বলেন :
Dhrupad style of singing is supposed to have been started by Raja Mansingho of Gwalior.
সংগীতজ্ঞ রাজা মানসিংহ তোমর ও তাঁর বিদুষী পত্নী মৃগনয়নী ‘ধ্রুপদ’ গানকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যাপক প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন।
কোনো কোনো সংগীত-গবেষক ও গুণীজন মনে করেন, পাঠান রাজত্বকালে ঋদ্ধ সংগীতসাধক নায়ক গোপাল এবং তাঁর সমসাময়িক বিদগ্ধ সংগীতসাধক নায়ক বৈজু বাওরা; স্বনামখ্যাত এই দুই সংগীতজ্ঞের মাধ্যমেই এই গানের প্রচলন ঘটে। তাদের মতানুসারে সংগীতজ্ঞ নায়ক গোপালের ‘ছন্দ প্রবন্ধ গীত’ পরবর্তীকালে সময়ের আবর্তে ‘ধ্রুপদ’ গানে রূপান্তরিত হয়। আবার অনেক গুণীজনের মতে, প্রাচীন প্রবন্ধ সংগীতের ধ্রুবাংশ থেকে এই গায়ন শৈলীর নামকরণের জনক হচ্ছেন সংগীতজ্ঞ নায়ক বৈজু বাওরা। তিনি নিজেও অনেক উচ্চাঙ্গ ধ্রুপদ গানের রচয়িতা।
আধ্যাত্মিক শাস্ত্রীয় সংগীত ধ্রুপদ হচ্ছে ঈশ্বর বা দেব-দেবীর বন্দনামূলক। আধ্যাত্মিক ভাবমণ্ডিত এই গানের মধ্য দিয়ে শিল্পীরা ঈশ্বরের উপাসনা করে থাকেন। শৃঙ্গার, শান্ত অথবা বীররসপ্রধান এই শৈলীর গান প্রধানত হিন্দি, উর্দু ও ব্রজভাষায় রচিত হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই শৈলীর গান রচনায় উল্লিখিত তিন প্রকারের ভাষারই সংমিশ্রণ ঘটতে দেখা যায়। বর্তমানে বাংলা ভাষায় রচিত গানের সংখ্যাও বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো।
ধ্রুপদ গান সাধারণত স্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী ও আভোগ এই চারটি ‘তুক্’ বা ‘বিভাগ’ নিয়ে গঠিত হয় বলে অনেক সংগীতগুণীজন একে ‘চার তুক’ নামেও অভিহিত করে থাকেন। আবার ‘স্থায়ী’ ও ‘অন্তরা’ এই দুই ‘তুক’ বা ‘ভাগ’ বিশিষ্ট ধ্রুপদ গানও শুনতে পাওয়া যায় । ধ্রুপদশৈলীর গানের প্রতিটি বিভাগে তিনটি বা চারটি করে পক্তি বা চরণ লেখা হয়ে থাকে।
The dhrupad consists of stanzas of three or four rhythmical lines of any length. (Goldarins – Ain-i-Akbari, Page: 130)
ধীর ও গম্ভীর প্রকৃতির এই গানের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করার জন্য অবনদ্ধ শ্রেণির বাদ্য পাখোয়াজের সংগত বহুল প্রচলিত হলেও এতে মৃদঙ্গের ব্যবহারও দেখা যায়। সাধারণত চৌতাল, ঝাঁপতাল, তেওড়া বা তীব্রা, ব্রহ্মতাল, রুদ্রতাল, সুরফাঁকতাল ইত্যাদিতে ধ্রুপদ গান নিবদ্ধ করা হয়।
এই শৈলীর গান পরিবেশনায় প্রধানত ‘আলাপ’ ও ‘বন্দিশ’ দুটি অংশ লক্ষ করা যায়। প্রথমে ‘আলাপ’ অংশের মাধ্যমে শিল্পী তানপুরা কিংবা সুরযন্ত্রের ব্যবহার করে রাগের ধ্যানরূপ ফুটিয়ে তোলেন। এ অংশে তাল বাদ্যযন্ত্রের সহযোগিতা ছাড়া এবং গানের বাণী বা কথার পরিবর্তে ওম্, রে না, ন্যা, না তোম, তে না না, রি, দা না, নোম, আ, অ্যা ইত্যাদি অর্থহীন ধ্বনি সহযোগে সুরের সূক্ষ্মতম অনুভূতিপ্রবণ এই প্রসরণ বা বিস্তারের মাধ্যমে রাগের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী, অন্তরা, ভোগ, আভোগ ও সঞ্চারী পাঁচটি বিভাগে মিড়, গমক ইত্যাদির সাহায্যে বিলম্বিত থেকে ক্রমশ দ্রুতলয়ে ‘আলাপ’ শেষ করা হয়ে থাকে।
বড় রাগে করা হয় ‘বিস্তার আলাপ’ অন্যথায় ‘অওচার আলাপ’। আলাপের পর মূল গানে প্রবেশ করা হয় অর্থাৎ ধ্রুপদের বাণী উচ্চারিত হয়। দ্বিতীয় এই অংশে শিল্পী তালবদ্ধ বাণী অর্থাৎ বন্দিশ গেয়ে থাকেন। শব্দপ্রধান গায়নশৈলীর কারণে এর শব্দের প্রতিটি অক্ষর তালের মাত্রার সঙ্গে নির্দিষ্টভাবে সুরে প্রলম্বিত করা হয়। ঠায় লয়ে (স্বাভাবিক লয়ে) গাওয়ার পর দুগুণ, তিনগুণ, চৌগুণ, ছয়গুণ, আটগুণ ইত্যাদি লয়ে বন্দিশ গাওয়া হয়। প্রয়োজনবোধে উক্ত লয়েই গমক, তেহাই ইত্যাদি প্রয়োগ করে গান শেষ করা হয়। আবার কখনো একটি বিভাগে গেয়ে লয়কারীর কাজ শেষে পরবর্তী বিভাগ গাওয়া হয়ে থাকে। এই শৈলীর গানে বোল-তানের প্রয়োগও হয়ে থাকে।
হিন্দুস্তানি সংগীতের ধ্রুপদ গানের ক্ষেত্রে বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গায়নশৈলীকে অর্থাৎ এই গান গাওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় ‘বাণী’। তৎকালীন সময়ে ‘ঘরানা’ শব্দটির জন্ম না হলেও বিশেষ শৈলীর ধ্রুপদ গায়ন পদ্ধতিকে চিহ্নিত করা হতো ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন নামে। ঐতিহাসিক ভিত্তিতে জানা যায়, দিল্লির সম্রাট আকবরের (রাজত্বকাল : ১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ) দরবারস্থিত চারজন বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞের গায়নশৈলী অনুযায়ী গানের চার প্রকার ‘বাণী’ বা ‘গীতশৈলী’ প্রচলিত হয়। নিজস্ব স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ বাণীগুলোর প্রবর্তকের বাসস্থানের নামানুসারে প্রতিটি গায়নশৈলীর নামকরণ করা হয়েছিল।
ধ্রুপদের প্রচলিত বাণী [ Dhrupad Vani, School of Dhrupad ] –
প্রচলিত বানী চার প্রকার :
১. গওহর বা গোবরহার বাণী,
২. খণ্ডার বা খাণ্ডার বাণী,
৩. ডাগর বা ডাগুর বাণী এবং
৪. নৌহার বা নওহার বাণী।
গওহর বা গোবরহার বাণী [ Gauhar Vani – Dhrupad ] :
হাকিম মহম্মদ রচিত মাদনুল মৌসীকী গ্রন্থানুযায়ী জানা যায় যে, আকবর বাদশাহর রাজদরবারের সভাসংগীতজ্ঞ এবং শ্রেষ্ঠ রত্ন সংগীতসম্রাট মিয়া তানসেন হলেন গওহর বা গোবরহার বাণীর প্রবর্তক। কোনো কোনো সংগীতগুণীজন এই গীতশৈলীকে শুদ্ধ বাণী বা গৌড়হর বাণী কিংবা গওড়হার বাণী বলে থাকেন। তানসেনের বাসস্থান গোয়ালিয়রের নামানুসারে তাদের গানের এই গায়নশৈলীর নামকরণ হয়েছে গওহর বা গোবরহার বাণী। ভিন্নমতানুসারী সংগীতগুণীজনদের কেউ কেউ বলেন, নায়ক কুম্ভন দাসের বংশধরদের মধ্যে কোনো একজন সংগীতজ্ঞ এই বাণীর স্রষ্টা।
আবার কারো মতে, প্রাচীন গীতরীতি ‘ভিন্না’ থেকে এই শৈলীর গান উদ্ভাবিত হয়েছে। কেননা প্রাচীন গীতরীতি ভিন্নার সঙ্গে গোবরহার বাণীর বিশেষ মিল দেখা যায়। সংগীতসম্রাট মিয়া তানসেন প্রবর্তিত শুদ্ধ বা গওহর বাণীর গানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—এটি খুবই স্পষ্ট, ধীরগতিসম্পন্ন, শান্ত-রসাপ্লুত, মিড়প্রধান ও গম্ভীর প্রকৃতির। তাঁর রচিত সকল সঙ্গীতে লয়কারীর অনুপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
খণ্ডার বা খাণ্ডার বাণী [ Khandar Vani – Dhrupad ] :
রাজপুতনার সর্বশ্রেষ্ঠ বীণাশিল্পী মিস্ত্রি সিং ওরফে সম্মুখন সিংহ হলেন ‘খণ্ডার’ বা ‘খাণ্ডার’ বাণীর প্রবর্তক। সম্রাট আকবরের দরবারি সভাবাদক এবং শ্রেষ্ঠ সংগীতজ্ঞ সম্মুখন সিংহ পরবর্তীকালে ধর্মান্তরিত হয়ে ‘বড় নৌবাদ খাঁ’ নাম গ্রহণ করেন। নিজ বাসস্থান খাণ্ডারের নামানুসারে তাঁর প্রবর্তিত ধ্রুপদ গানের বিশেষ শৈলীটি খণ্ডার বাণী বা খাণ্ডার বাণী নামে পরিচিতি লাভ করে। সংগীতস্রাট মিয়া তানসেনের জামাতা বড় নৌবাদ খাঁ রচিত খাণ্ডার বাণীর চলন অতি বিলম্বিত লয়ে। স্বরগুলোকে সরলভাবে না দেখিয়ে খণ্ড খণ্ড ভাবে দেখানোই খাণ্ডার বাণীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
তিন সপ্তকের এই বাণীর স্বরগুলো বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ খাণ্ডার বাণী ‘গমক’ ও ‘খটকা’ প্রধান এবং কিছুটা চঞ্চল প্রকৃতির। প্রাচীন ‘গৌরী’ পদ্ধতির গীতরীতির সঙ্গে এই বাণীর বিশেষ মিল দেখা যায়।
ডাগুর বা ডাগর বাণী [ Dagar Vani – Dhrupad]:
দিল্লিধিপতি আকবর বাদশাহর রাজদরবারের সভাসংগীতজ্ঞ বৃজচন্দ হলেন ডাগুর বা ডাগর বাণীর উদ্ভাবক। ঋদ্ধ এই সুরসাধকের বাসস্থান ডাগুর গ্রামের নামানুসারে ধ্রুপদ গানের উল্লিখিত বাণীর নামকরণ করা হয়েছে। সহজ, সরল, আড়ম্বরহীন ও মধুররূপে পরিবেশনের গুণে ডাগুর বা ডাগর বাণী গীতশৈলীর একটি বিশিষ্ট স্থান রয়েছে। এতে সরল অলংকার বা বর্ণ ব্যতীত অন্য অলংকার, মিড়, গমক ইত্যাদি অনুপস্থিত । ডাগুর বাণী ‘খাড়াস্বর’ ও ‘লপক’ যুক্ত এবং মিড়বিহীন সরল ‘লাগ’ ও ‘ডাট’-এর প্রয়োগ বেশি। প্রাচীন ‘শুদ্ধারীতি’ গীতশৈলীর সঙ্গে ডাগুর বাণীর বিশেষ মিল রয়েছে।
নৌহার বা নওহার বাণী [ Nauhar Vani – Dhrupad ]:
রাজপুতনার তৎকালীন শ্রেষ্ঠ সংগীতজ্ঞ এবং সম্রাট আকবরের রাজসভা সংগীতজ্ঞ শ্রীচন্দ ওরফে সুরষ খা হলেন নৌহার বা নওহার বাণীর উদ্ভাবক। আবার অনেক সংগীতগুণীজন বিদগ্ধ সাধক ও দিল্লি রাজসভা সংগীতজ্ঞ সুজন দাস ওরফে সুজন খাঁকে এই বাণীর প্রবর্তক বলে মনে করেন। সত্যিকার অর্থে ধ্রুপদ গানের এই শৈলীটি দুজনের মধ্যে কোনজন প্রবর্তন করেন তা সঠিকভাবে নিরূপণ করা আজো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে এটা ঠিক যে, উভয় সংগীতজ্ঞের বাসস্থান নওহার হওয়ায় গীতশৈলীটি নওহার বা নৌহার বাণী নামে প্রতিষ্ঠা পায় এবং ধারণা করা হয়, এই বাণী সৃষ্টিতে উভয় সংগীতজ্ঞেরই যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে স্বর প্রয়োগসহ এক বা একাধিক স্বর অতিক্রম করে অপর স্বরে দ্রুতলয়ে আরোহণ ও অবরোহণ করা নৌহার বাণীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চপল গতিবেগসম্পন্ন নওহার বাণীর গান সাধারণত লড়ন্ত প্রকারের হয় এবং এই গীতশৈলীতে ঝটক, ছুট, পুকার প্রভৃতির প্রাধান্য থাকে। অনেক সংগীতগুণীজনের ধারণা, নবরসের আবির্ভাব এই শৈলীতে রূপায়িত হতো বলেই একে বলা হয় নওহার বাণী। প্রাচীন ‘বেসরা’ গীতিপদ্ধতির সঙ্গে নৌহার বা নওহার বাণীর বেশ মিল পরিলক্ষিত হয় ।
সংগীতসম্রাট মিয়া তানসেনের দৃষ্টিকোণ ও তাঁর রচিত ধ্রুপদ গানের ভাষা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শুদ্ধ বা গওহর বাণীকে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বলেছেন। তারপর পর্যায়ক্রমে খাণ্ডার বাণী, ডাগর বাণী ও নওহার বাণীর স্থান নির্দেশ করেছেন। এই চারটি ‘বাণী’ ছাড়াও ‘ধারু ধ্রুপদ’ নামে আরেক শ্রেণির শাস্ত্রীয় সংগীতের কথাও জানা যায়।
ধারু [ Dharu Dhrupad ]
সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজির শাসনামলে (রাজত্বকাল : ১২৯৬-১৩১৬ খ্রিষ্টাব্দ) তাঁর রাজদরবারের সভাসংগীতজ্ঞ নায়ক গোপাল সম্পূর্ণ ভিন্ন গায়নশৈলীর একধরনের ‘ধ্রুপদ’ গান সৃষ্টি করেছিলেন। সংগীতবিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থে যা ‘ধারু-ধ্রুপদ’ নামে উল্লিখিত রয়েছে। এই গীতশৈলীর রূপ ও চলন বা গতি ছিল অন্যদের শৈলীর মতোই। বিশেষ দীর্ঘ অবয়বের ধারু গানের তুক বা ভাগগুলো ছিল – স্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী, আভোগ এবং অতিরিক্ত সঞ্চারী আভোগ।
এই শৈলীর গান কেবলমাত্র ‘গীতাঙ্গী ছন্দ’ অর্থাৎ ৩/২/২ ছন্দের তেওড়া তালেই নিবদ্ধ হতো। বর্তমান সময়ে ‘ধারু’ শৈলীর গান অপ্রচলিত হয়ে গেছে। শাস্ত্রীয় সংগীতে ধ্রুপদ গানকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। আর এই গানের শিল্পীদের বলা হতো কলাবন্ত।
উদাহরণস্বরূপ একটি জনপ্রিয় ধ্রুপদ গান উল্লেখ করা হলো –
জাগ মেরে ভাগ আজ
শ্যাম সুন্দর কমল নয়ন
আন ঠ্যারে মেরে দুয়ার ॥
তান মন ধন নৌছাবর
কারিহ ম্যায় পারিহো পাইয়া
লাইহো বালাইয়া আজ বারবার ॥
ঠাট কাফি, রাগ: কাফি, বাদীস্বর : পঞ্চম (প), সমবাদীস্বর : ষড়জ (স), অঙ্গ উত্তরাঙ্গ প্রধান, জাতি : সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ, গায়ন সময় মধ্যরাত্রি, আরোহী : স র জ্ঞ ম প ধ ণ র্স, অবরোহী : র্স ণ ধ প মজ্ঞ র স। বি.দ্র. স্থায়ীর দ্বিগুণ চতুর্থ মাত্রা থেকে। ‘ভাগ’ বলে তিনগুণ। ‘মে’ বলে এগারো মাত্রা থেকে অন্তরার দ্বিগুণ ১ মাত্রা থেকে ‘নৌছাবর’ বলে। তিনগুণ মে বলে এগারো মাত্রা থেকে।]
ধ্রপদ সম্পর্কে আরও জানুন:
1 thought on “ধ্রুপদ । গীত ধারা । হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত”