দিল্লি ঘরানা [ Delhi Gharana ]: মুঘল সাম্রাজ্যের শেষভাগে সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ কাদির বখসকে ‘তানরস’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। সংগীত ইতিহাসের ভিত্তিতে এই প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ তানরস খাঁ ‘দিল্লি-ঘরানা’র প্রবর্তন করেন বলে জানা যায়। কথিত রয়েছে, ওস্তাদ হসু ও হদ্দু এবং হাপুড় ঘরানার ইউসুফ খাঁ ও দিল্লির ওস্তাদ চাঁদ খাঁ এই ঘরানার ধারক ও বাহক। কোনো কোনো সংগীতগুণীজনের মতে, সংগীতজ্ঞ সদারঙ্গ ও অদারঙ্গ এই ঘরানার সৃষ্টি করেছেন। আবার ভিন্নমতে শোনা যায়, দিল্লি নগরীর অধিবাসী সাবন্ত ও বুলা নামে দুই ভাই এই ঘরানার প্রবর্তক। তাঁরা কওয়াল বংশোদ্ভূত বলে পরিচিত ছিলেন এবং এই বংশে অপচল নামের দিল্লি ঘরানার একজন প্রসিদ্ধ গায়ক ছিলেন।

ওস্তাদ তানরস খাঁ সাহেবের সুযোগ্য পুত্র ওস্তাদ উমরাও খাঁ দিল্লি-ঘরানার প্রচার ও প্রসারে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। তাঁর প্রচেষ্টায় এই ঘরানা সংগীতপিপাসুদের হৃদয়কে আন্দোলিত করে চমৎকারিত্বের সঙ্গে। দিল্লি ঘরানার ধারক ও বাহকদের মধ্যে ওস্তাদ মোজাফ্ফর খাঁ, ওস্তাদ আলী বখস, মম্মন খাঁ, বুন্দু খাঁ (সারেঙ্গিশিল্পী), ওস্তাদ ফতেহ আলী খাঁ এবং বাংলার প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ গিরিজাশংকর চক্রবর্তী প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
দিল্লি ঘরানার বৈশিষ্ট্য [ Speciality of Delhi Gharana ] :
- তান প্রয়োগে অসাধারণ কুশলতা
- গমকের প্রাধান্য
- বোলতানের বৈচিত্র্য
- খেয়ালের কলাপূর্ণ বন্দিশ
- কঠিন লয়কারী।
দিল্লি ঘরানার বিশিষ্ট শিল্পী [ Some prominent exponents of Delhi Gharana ] :
- ফাইয়াজ খান (১৮৮৬-১৯৫০) “প্রেম্পিয়া”
- বিলায়ত হোসেন খান “প্রাণ পিয়া” (১৮৯৫-১৯৬২)
- খাদিম হোসেন খান “সাজন পিয়া” (১৯০৭-১৯৯৩)
- শরাফত হোসেন খান “প্রেম রঙ” (১৯৩০-১৯৮৫)
- শ্রীকৃষ্ণ নারায়ণ রতনজঙ্কর “সুজন” (১৯০০-১৯৭৪)
- বাবনরাও হালদঙ্কার “রাসপিয়া” (১৯২৭-২০১৬)
- জোহরাবাই (১৮৬৮-১৯১৩)
- পন্ডিত যশপল “সগুন পিয়া” (জন্ম ১৯৩৭)
- রামারাও ভি. নায়েক (১৯০৯-১৯৯৮)
- ললিথ জে. রাও (জন্ম ১৯৪২)
- সুমতি মুতাটকার (১৯১৬-২০০৭)
- শুভ্র গুহ (জন্ম ১৯৫৬)
- ওস্তাদ ওয়াসিম আহমেদ খান (১৯৮৮ -বর্তমান)
- মহসিন খান নিয়াজী (১৯৬৫-২০২০)
আরও দেখুন:
1 thought on “দিল্লি ঘরানা | গীত ঘরানা, কণ্ঠশিল্পী বা গানের ঘরানা | সঙ্গীতের ঘরানা”