দত্তাত্রেয় পালুস্কর : সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তী পুরুষ প্রারব্ধ কর্মদোষে আরব্ধ কর্মসমাপনান্তে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ২৬ অক্টোবর মাত্র ৩৫ বৎসর বয়সে ইহলোকের মায়া পরিত্যাগ করিয়া শান্তি পারাবারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। মৃত্যুকালে তিনি বসন্তকুমার নামে এক পুত্র এবং পাঁচ বৎসরের এক কন্যা রাখিয়া যান।
দত্তাত্রেয় পালুস্কর । শিল্পী জীবনী
তিনি প্রখ্যাত গায়ক তথ্য সঙ্গীত সাধক পণ্ডিত বিষ্ণুদিগম্বর পালুস্করের সুযোগ্য পুত্র ছিলেন। পূর্বে আরও ১১ জন ভাইবোন অতি অল্প বয়সে মারা যাওয়ার পর দত্তাত্রের ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মে কোলাপুরের নিকটবর্ত্তী কুরন্দবাড় নামক গ্রামে বিজয়া দশমীর দিন জন্মগ্রহণ করেন। ফলে তাঁহার আয়ুষ্কাল সমন্ধে পিতামাতা বিশেষ সন্দিহান ছিলেন।
সেই কারণে মাত্র ৮ বৎসর বয়সে তাঁহার উপবীতকালে বিশেষ ধুমধাম সহকারে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রারম্ভে তিনি মর্ডাণ হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পিতার মৃত্যু হওয়া হেতু পণ্ডিতজীর নিকট বেশীদিন সঙ্গীত শিক্ষার সুযোগ তিনি পান নাই। দত্তাত্রেয় খুড়তুতো ভাই চিন্তামণি দত্তাত্রের নিকট পুনরায় সঙ্গীত শিক্ষা সুরু করেন। কিন্তু বিশেষ সুবিধা না হওয়ার জন্য ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় গান্ধর্ব মহাবিদ্যালয়ে তাঁহার পিতার সুযাগ্যে শিষ্য বিনায়ক রাও পাটাবন্ধনের নিকট তালিম নিতে শুরু করেন এবং সঙ্গীত প্রবীণ পরীক্ষায় সবিশেষ কৃতিত্বের সহিত উত্তীর্ণ হইয়া উক্ত মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন।
দাত্তাত্রের পালুস্কর তাঁহার পিতার সুযোগ্য শিষ্য নারায়ন রাও ব্যাস এবং মিরাশী বুয়া প্রমুখের নিকট ও তালিম পান। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে শুরু বিনয়াক রাও পট্যবৰ্দ্ধনজীর সহিত লাহোরে যান এবং সেখানকার সঙ্গীতজ্ঞগণ গুরুপুত্রকে নিকটে পাইয়া সবিশেষ আনন্দিত হন। বন্ধরের বিখ্যাত হরবল্লভ মেলায় মাত্র ১৫ বৎসর বয়সে সর্বপ্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করিয়া ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতার “অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সে” সঙ্গীত পরিবেশন করিয়া শ্রোতৃবৃন্দকে সবিশেষ মুগ্ধ করেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে পিতার তিরোধান দিবস উপলক্ষে বোম্বে বেতার কেন্দ্রে সর্বপ্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে গ্রামোফোন কোম্পানীতে প্রথম রেকর্ড করেন এবং সেই বৎসর শ্রীমতী ঊষার সহিত বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন।
যদিও গোয়ালিয়র ঘরানা হস-হন্দু খার গায়কীতে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন কিন্তু বিশষ্ট সঙ্গীতগুণীদের বিশিষ্ট গায়কী তথা বৈশিষ্টপূর্ণ সাঙ্গীতিক ধারাকে অনুকরন করার উদারতা তাঁহার ছিল। তিনি আত্মা ঘরাণার বোলতান, আল্লাদিয়া ঘরাণার বক্রতান ও কিরানা ঘরানার সুরের ইন্সজালকে নিজ সঙ্গীত ধারায় প্রযুক্ত করিয়া এক অভিনব সঙ্গীত মূৰ্চ্ছানায় জন্ম দিয়া গিয়াছেন।
বলা বাহুল্য সাধক পিতার আধ্যাত্মবাদ তাঁহার ভজন গানগুলির মধ্যে স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রকাশিত হইয়াছিল। তাঁহার প্রিয় রাগগুলির মধ্যে ললিত, রামকেলী, টৌড়ী, ভৈবর, বাহার, দেশী, গৌড়সারং, মূলতানী, শ্রী, কেদার, ছায়ানট, মিঞামল্লার, গৌড়ামল্লার, রাগেশ্রী, তিলক কামোন, মালকোষ, মালগুঞ্জী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
তিনি চীন দেশে সঙ্গীত পরিবেশনে আমন্ত্রিত হইয়া যান কিন্তু বিশেষ মাতৃভক্ত পালুস্কর মাতৃ-আজ্ঞা না পাওয়া হেতু রাশিয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করেন। এই ক্ষণজন্মা অমর সঙ্গীত শিল্পী জীবনের শুভারম্ভেই হঠাৎ করিয়া যে শূন্যতার সৃষ্টি করিয়া গিয়াছেন তাহা অপূরণীয়।
আরও দেখুনঃ