তানসেন ঘরানা [Tansen Gharana ]: মুঘল সম্রাট আকবরের রাজদরবারে ১৫৬৮ খ্রিষ্টাব্দে নবরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্ন হিসেবে অধিষ্ঠিত হন সংগীতজ্ঞ মোহাম্মদ আতা আলী খান। রাজদরবারের এক জলসায় তাঁর অভূতপূর্ব সংগীতপ্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে সম্রাট তাঁকে সম্মানের সঙ্গে প্রদান করেন ‘মিয়া তানসেন’ উপাধি। একই সঙ্গে তিনি ‘অতাই’ বা সর্বশ্রেষ্ঠ গায়ক সম্মানে ভূষিত হন। শুধু শিল্পীই নন, বরং তিনি ছিলেন অত্যন্ত উঁচুমানের একজন সংগীতস্রষ্টা, কবি ও সুদক্ষ বাদ্যযন্ত্র শিল্পী।

চারটি তুকযুক্ত বহু ধ্রুপদ গান রচনাসহ ধ্রুপদকে স্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী ও আভোগে বিভক্ত করে নবরূপে রূপায়িত করেছেন। রাগে সপ্তস্বরের প্রয়োগ করে তিনি এনে দিয়েছেন নবীন অনুভূতি, অপূর্ব রস ও চমৎকার নান্দনিকতা। তাঁর নিজস্ব ও নতুন সংগীতশৈলী ‘তানসেন ঘরানা’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। সংগীতের বাদন স্রোতধারায় যুক্ত করতে ‘রবাব’ নামে একটি অভিনব বাদ্যযন্ত্র আবিষ্কার করে সবাইকে মধুর সুরঝংকারে মুগ্ধ করে দেন। তাঁর রচিত সংগীতত্সার ও রাগমালা নামে সংগীতবিষয়ক দুটি গ্রন্থের কথা জানা যায়।
মিয়া তানসেনের চার পুত্র – সুরত সেন, তরঙ্গ সেন, শরৎ সেন ও বিলাস খাঁ এবং একমাত্র কন্যা সরস্বতী সংগীতবিদ্যায় যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। এই গুণীজনেরা সবাই পিতৃ-ঘরানার ধারক ও বাহক হিসেবে তাঁদের বংশ এবং শিষ্যপরম্পরায় তানসেন ঘরানার প্রচার ও প্রসারে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। মিয়া তানসেনের জামাতা মিশ্র সিংহ ওরফে নৌবত খাঁ এই ঘরানার অসামান্য কুশলী বীণাশিল্পী ছিলেন।

বংশ ও শিষ্য পরম্পরায় তানসেনের পুত্র বংশীয় সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ বাহাদুর সেন খাঁ, রামপুরের উমরাও খাঁ খণ্ডারে, তাঁর পুত্র ওস্তাদ রহিম খাঁ ও আমির খাঁ (সরোদশিল্পী), ওস্তাদ আমির খাঁ সাহেবের পুত্র ভারতবিখ্যাত ওস্তাদ ওয়াজির খাঁ (বীণাশিল্পী), ওস্তাদ কাশেম আলী খাঁ (রবাবশিল্পী), রামপুরের নবাব হামিদ আলী খাঁ, ওস্তাদ ওয়াজির খাঁ সাহেবের নাতি ওস্তাদ দবির খা (বীণাশিল্পী), সংগীতাচার্য পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ডে, সংগীতরত্ন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ প্রমুখ খ্যাতিমান সংগীতগুণীজন তানসেন ঘরানার ধারাকে তাঁদের সংগীতশৈলীতে অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন।
মিয়া তানসেনের সংগীতপ্রতিভা নিয়ে বহু কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে। তাঁকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গায়ক ও বাদ্যশিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানসহ ‘সংগীতসম্রাট’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। মিয়া তানসেনের সমসাময়িকদের মধ্যে বৃজচন্দ, শ্রীচন্দ, বাবা মদন রায়, সদুল্লা খাঁ ছিলেন সুবিখ্যাত বীণাশিল্পী।
তানসেন ঘরানার বৈশিষ্ট্য [ Speciality of Dagar Gharana ] :
- চারতুক বিশিষ্ট ধ্রুপদ গায়নে বিশেষ দক্ষতা
- তান ও বোলতানে অভূতপূর্ব কুশলতা
- বীণ অঙ্গের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঢঙের নৈপুণ্য
- সপ্তকের সকল অবস্থাতেই সহজ গমনাগমন
- উদাত্ত ও গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বরের প্রয়োগ।
আরও দেখুন:
1 thought on “তানসেন ঘরানা | গীত ঘরানা, কণ্ঠশিল্পী বা গানের ঘরানা | সঙ্গীতের ঘরানা”