গৌতম চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন বাঙালি সঙ্গীতঙ্গ, গায়ক, গীতিকার, থিয়েটার ব্যক্তিত্ব, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং নৃতাত্তিক, যিনি মহীনের ঘোড়াগুলি ফোক-রক ব্যন্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে পরিচত।
প্রাথমিক জীবন
গৌতম চট্টোপাধ্যায় ১৯৬০-এর দশকে প্রেসিডেন্সি কলেজে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে তার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বন্ধুদের নিয়ে ‘দ্য আর্জ’ নামে একটি ব্যন্ড গঠন করেন।
গৌতম চট্টোপাধ্যায় ওরফে ‘মণিদা’ বাংলার গানের জগতে এক ঝড়ের নাম। যিনি এলেন, দেখলেন, লড়াই করলেন; এবং শেষে জয়ও করলেন। তিনি যখন এসেছিলেন, বাংলার সঙ্গীত জগত তখন হেমন্ত-মান্না-কিশোরে মজে। সে যেন আলাদা জগত। কিন্তু বিশ্বসঙ্গীতের থেকে কোথাও যেন ছিটকে আছে বাঙালি। দক্ষিণ কলকাতায় বাড়ি, বাবা বিজ্ঞানী। তবে গান-বাজনার আবহ ছিলই। কিন্তু বোহেমিয়ান গৌতম এসবে বেশিদিন মজে থাকেননি।
প্রেসিডেন্সি কলেজে ফিজিওলজি নিয়ে পড়ার সময়ই শুরু হয় গিটার-প্রেম। গৌতম চট্টোপাধ্যায় তখন কলেজ চত্বরে পরিচিত মুখ। শুধু গানই নয়, তাঁর মুখে উঠে আসছে রাজনীতির কথা। শোষিত শ্রেণীর কথা। ইতিমধ্যেই ‘আর্জ’ নামের গানের দলও তৈরি করেছেন। পার্ক স্ট্রিটের হোটেলে চলছে গান। কিন্তু সেসব তো ইংরেজি গান! দেশের মানুষের লাছে পৌঁছতে গেলে, তাঁদের কথা বলতে গেলে তো সেটা ছাড়তে হবে। বাংলা গানেরই হাত ধরতে হবে। একসময় গৌতম ছাড়লেন নিজের দলটিও।
নকশাল আন্দোলন
১৯৬৯-৭০ সালের দিকে নকশাল আন্দোলনের সাথে গৌতম চট্টোপাধ্যায় মনেপ্রাণে জড়িত হয়ে পড়েন। ফলে তিনি গ্রেপ্তার ও নির্যাতিত হন। এরপর তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশ লক-আপে পাওয়া যায়। যদিও এতো নির্যাতনের পরও তিনি কোন প্রকার তথ্য প্রকাশ করেননি। গৌতম বাংলা জীবনমুখী গানের ধারার আদিস্রষ্টা।
গৌতম চট্টোপাধ্যায় গানের জন্য সব ছেড়েছেন একসময়। চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছেন কলকাতায়। আর তারপরই শুরু হয় এক কিংবদন্তি অধ্যায়ের। যার নাম ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হাজির হলেন রঞ্জন, প্রদীপ ওরফে বুলা, রঞ্জন, অ্যাব্রাহাম, বিশু-সহ তরুণ গানপাগলরা। সত্যিই পাগল; আর সেজন্যই বাংলা গানের জগতে খুলে গেল এক নতুন জানলা। শুরুতে অবশ্য দলের নাম ছিল ‘সপ্তর্ষি’। পরে রঞ্জন ঘোষালের দেওয়া ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ নামটিই সবাই গ্রহণ করল।
‘হায় ভালোবাসি’, ‘কলকাতা’, ‘রানওয়ে’, ‘টেলিফোন’ থেকে ‘পৃথিবীটা নাকি…’— এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এই গানগুলো আজও কাল্ট তকমা ধরে রেখেছে। ‘পৃথিবীটা নাকি’ তো বাংলা ব্যান্ডের থিম সং হয়ে গেছে এখন! গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের চেতনা, দর্শন, রাজনৈতিক দীক্ষা-দৃষ্টি সবই মিলে মিশে গিয়েছিল গানে। কিন্তু শুরুর দিকে, সত্তরের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকেও এই গানগুলির কদর ছিল না। বরং অনেক ব্যঙ্গ বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে। আকাশবাণীতে বলা হয়েছে এসব নাকি কোনো গানই নয়। অবশ্য এসবে দিব্যি মজা পেতেন গৌতম চট্টোপাধ্যায়রা।
মৃত্যু
তিনি ১৯৯৯ সালের ২০ জুন মৃত্যুবরণ করেন।
আরও দেখুনঃ