খোদা বক্স । বাংলাদেশী বাউল শিল্পী ও সুরকার

খোদা বক্স ছিলেন একজন বাংলাদেশী বাউল শিল্পী ও সুরকার। তিনি লালনের অনুসারি ছিলেন এবং তার নিজের রচিত বাউল গানের সংখ্যা প্রায় ৯৫০টি। বাউল সঙ্গীতের তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯০ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে।

খোদা বক্স । বাংলাদেশী বাউল শিল্পী ও সুরকার

প্রারম্ভিক জীবন

বক্স ১৯২৮ সালে (৩০ চৈত্র, ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার জাঁহাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কফিলউদ্দীন ও মাতা ব্যাশোরণ নেছা। তার পিতামহ মিয়াজান বিশ্বাস ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার বিজলেমনহরপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। মিয়াজানের দুই ছেলে তিন কড়ি ও কফিলউদ্দীন। কফিল তার ৩৫ বছর বয়সে তার ফুফুর বাড়ি বর্তমান চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জাঁহাপুর গ্রামে চলে আসেন এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই খোদা বক্সের জন্ম হয়। খোদা বক্স পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন।

খোদা বক্স । বাংলাদেশী বাউল শিল্পী ও সুরকার

কর্মজীবন

মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে যিনি শৈশব জীবনের পাঠ চুকিয়েছেন। লেখাপড়া করবেন কি, তিনি ছিলেন মিষ্টি কণ্ঠের এক গানের কোকিল। তিনি দশ বছর বয়স থেকেই গান গাওয়া শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত গায়ক ছিলেন। তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় লালনের আখড়ায় কাটিয়েছেন।

কুষ্টিয়ার ছেউরিয়ায় লালনের আখড়া নির্মাণে তিনিও একজন উদ্যোগী ছিলেন।তিনি শুধু শিল্পীই ছিলেন না, সেই সাথে ছিলেন একজন সফল গীতিকার ও সুরকার, তিনি লালন শাহ এর গানের প্রকৃত সুরকার ছিলেন যার ফলশ্রুতিতে তিনি প্রায় ৯৫০ টি গান উপহার দিয়ে আমাদের লোকজ বাংলা সংস্কৃতি মহিমান্নিত করে গেছেন।

বিশ্বের বুকে বি¯তৃতি ঘটিয়েছেন আমাদের জাতীয় পদমর্যাদার। তিনার গানগুলো আধ্যাত্বিক তাৎপর্যে পরিপূর্ণ হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বমানবতার বাণী ও সুর ছন্দায়িত হয়েছে। আমরা যদি তাঁর জীবন পরিক্রমা নিয়ে গভীর ভাবে গবেষনা করি তবে দেখতে পাবো তিনি প্রকৃত পক্ষেই লালন শাহ-এর যোগ্য উত্তরসূরী।

১৯৮৩ সালে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে লালন সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।খোদা বক্স প্রায় ৯৫০টি গান রচনা করেছেন। তার রচিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান হল “শুভ সাধুসঙ্গ লয়ে সাঙ্গপাঙ্গ”, “দেবতা হারিয়ে পূজারী কাঁদবি কতদিন”।

খোদা বক্স । বাংলাদেশী বাউল শিল্পী ও সুরকার

ব্যক্তিগত জীবন

তিনি রাহেলা খাতুনের (লাইলি বেগম নামেও পরিচিত) সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুই সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ হলেন কন্যা মালঞ্চ এবং কনিষ্ঠ হলেন পুত্র আবদুল লতিফ শাহ। ১৯৯৭ সালে খন্দকার রিয়াজুল হক বক্সের গাওয়া ১৪৮টি গান সংবলিত “মরমী কবি খোদা বক্স সাঁই” বইটি সম্পাদনা করেন।

সম্মাননা

  • বাউল গানে অবদানের জন্য একুশে পদক (১৯৯০)
  • বাংলা একাডেমির ফেলো (১৯৮৫)

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment