ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁ । বাঙালি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী

ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁ উনিশ শতাব্দীর একজন বাঙালি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী। তিনি ছিলেন দ্বারভাঙার প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ কণ্ঠসঙ্গীতশিল্পী। সঙ্গীতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক একুশে পদকে ভূষিত হন।

ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁ । বাঙালি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী

জীবনী

ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁর জন্ম ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের বিহারের তিরহুত শহরে। পিতা ওস্তাদ আহমদ খাঁ। তার কৈশোর কেটেছে ভারতের পাটনা শহরে। ২০ বছর বয়সে তিনি মথুরা-বৃন্দাবনের মুরসান গ্রামের চান্দ খাঁর কন্যা সাকুরান বিবির সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। অতঃপর ৩৫ বছর বয়সে সপরিবারে ঢাকা চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

পিতার কাছেই তার সঙ্গীতে হাতেখড়ি।পরে পিতা ও পিতামহের কাছে তিনি ঐতিহ্যবাহী ‘ডাগর’ ঘরানায় সঙ্গীত শিক্ষাগ্রহণ করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে পিতার মৃত্যু হলে পিতৃব্য হায়দার বক্স তাঁর সঙ্গীত শিক্ষার দায়িত্ব নেন। এভাবে পারিবারিক ঐতিহ্যে গুল মোহাম্মদের সঙ্গীত জীবন গঠিত হয়।

ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁ । বাঙালি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী

পিতৃব্যের নিকট শিক্ষা সমাপ্ত করে গুল মোহাম্মদ আগ্রা গিয়ে বসবাস করেন এবং সেখানে আগ্রা ঘরানায় পারদর্শিতা লাভ করেন। ১৯০৮ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা চলে আসেন এবং এখানে স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন। গুল মোহাম্মদের দরাজ কণ্ঠ এবং জোরালো গায়নভঙ্গি ঢাকার শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। ক্রমশ তাঁর সঙ্গীত মাধুর্যে আকৃষ্ট হন সঙ্গীত রসিকরা এবং তাঁকে কেন্দ্র করে ঢাকায় গড়ে ওঠে একটি নতুন সাঙ্গীতিক পরিমন্ডল; বহু সঙ্গীত পিপাসু তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এক সময় তিনি শিষ্যদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘকাল এ কাজে ব্যাপৃত থাকেন। গুল মোহাম্মদের নিকট সঙ্গীত শিক্ষা করে যাঁরা বিখ্যাত হয়েছেন তাঁরা হলেন মুন্সি রইসউদ্দিন, উৎপলা সেন, লায়লা আর্জুমান্দ বানু প্রমুখ।

ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁ ধ্রুপদ ও খেয়াল উভয় ধারায়ই সমান দক্ষ ছিলেন। উপমহাদেশের বিভিন্ন সঙ্গীত জলসায় সঙ্গীত পরিবেশন করে তিনি ব্যাপক প্রশংসা ও সম্মান অর্জন করেন। ১৯৩৯ সালে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি উচ্চাঙ্গসঙ্গীত পরিবেশন করেন। তখন থেকেই তিনি ঢাকা বেতারে একজন সঙ্গীত শিক্ষকশিল্পী হিসেবে দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিক্ষার আসর প্রবর্তিত হলে তিনি সেই আসর পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।

ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁ । বাঙালি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী

পুরষ্কারসমূহ

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁ বহুবার পুরস্কৃত ও সম্মানিত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৯৬৫ সালে ‘বুলবুল একাডেমী পুরস্কার’, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ‘স্বীকৃতি সংবর্ধনা’ এবং ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের ‘একুশে পদক’ উল্লেখযোগ্য।

আরও দেখুনঃ

FacebookTwitterEmailShare

Leave a Comment