খুরশিদ আলম খান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার বিভাগে সাতবার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
Table of Contents
প্রাথমিক জীবন
আলম খান ১৯৪৪ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সেক্রেটারিয়েট হোম ডিপার্টমেন্ট এর এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার ও মা জোবেদা খানম ছিলেন গৃহিণী। তার মা জোবেদা খানম ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার দরবারের এক শিল্পীর বংশধর।
সিরাজগঞ্জে কয়েক বছর থাকার পর বাবার চাকরি সুবাদে কলকাতায় চলে যান। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বাবার সাথে ফিরে আসেন ঢাকায়। তারপর ঢাকাতেই স্থায়ী হন এবং সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই মেট্রিক পাস করেন। স্কুলে থাকাকালীন তার গানের প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়। বাবা আফতাব উদ্দিন প্রথমে অনাগ্রহ দেখালেও মায়ের উৎসাহে গানের চর্চা চালিয়ে যান। পরবর্তীতে তার বাবাই তাকে ওস্তাদ ননী চ্যাটার্জীর কাছে গানের তালিমের জন্য নিয়ে যান। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে আলম খান মেজো। বাংলাদেশের প্রখ্যাত পপ সঙ্গীত শিল্পী আজম খান ছিলেন তার ছোট ভাই।
সঙ্গীত জীবন
আলম খান ১৯৬৩ সালে রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে তালাশ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। ১৯৭০ সালে প্রথম চলচ্চিত্রকার আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত কাচ কাটা হীরে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এককভাবে সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করেন। তার সুরকৃত প্রথম জনপ্রিয় গান স্লোগান ছায়াছবির “তবলার তেড়ে কেটে তাক”। এরপর ১৯৭৭ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন তার পরিচালিত সারেং বৌ চলচ্চিত্রের গান নিয়ে কথা বলার সময় তার ১৯৬৯ সালের সুর করা একটি মুখরা শুনালে ছবির পরিচালক তা নিতে আগ্রহী হন।
১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই ছবির আবদুল জব্বারের কণ্ঠে “ওরে নীল দরিয়া” গানটি তার এক অনন্য সৃষ্টি। ১৯৮২ সালে রজনীগণ্ধা চলচ্চিত্রে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া “আমি রজনীগণ্ধা ফুলের মত” ও বড় ভালো লোক ছিল চলচ্চিত্রের সৈয়দ শামসুল হকের লেখা এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে “হায়রে মানুষ রঙ্গীন ফানুস” দর্শকদের মনোযোগ কাড়ে। বড় ভালো লোক ছিল চলচ্চিত্রের জন্য অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
১৯৮৫ সালে তার সুর করা তিন কন্যা চলচ্চিত্রের “তিন কন্যা এক ছবি” গান দিয়ে প্লেব্যাক শুরু করেন কলকাতার নামকরা সঙ্গীতশিল্পী কুমার শানু। নাগ পূর্ণিমা চলচ্চিত্রের এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া রক ধাঁচের “তুমি যেখানে আমি সেখানে”, ভেজা চোখ চলচ্চিত্রের এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে “জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প” গানগুলো শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করে।
পারিবারিক জীবন
আলম খান ১৯৭৬ সালে হাবিবুননেসা গুলবানুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গুলবানু একজন গীতিকার। আলম খানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে গাওয়া “তুমি তো এখন আমারই কথা ভাবছো” গানটির গীতিকার গুলবানু। তাদের দুই ছেলে আরমান খান ও আদনান খান দুজনেই সঙ্গীত পরিচালক এবং একমাত্র মেয়ে আনিকা খান।
শারীরিক স্বাস্থ্য ও মৃত্যু
খান ২০১১ সালে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার জন্য তিনি বিভিন্ন দেশে যান। ০৮ জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:৩২ টায়, তিনি ইন্তেকাল করেন।
আরও দেখুনঃ